Thursday, April 25, 2024

সেকশন

English
Dhaka Tribune

‘টাকা লুটের অভিযোগ মিথ্যা, সুনির্দিষ্ট তথ্য না দিলে ক্ষমা চাওয়া উচিত’

আপডেট : ১৩ মে ২০১৮, ১২:৩৩ এএম

বর্তমান সরকারের সময় দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটের বিএনপির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলে জাতির কাছে বিএনপির ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

শনিবার (১২ মে) বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে ব্যাংকের টাকা চুরির সংস্কৃতি শুরু হয়। শুরু হয় ঋণখেলাপি সংস্কৃতি। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিচারাধীন ৩২টি পাচার মামলার বেশিরভাগই বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে তারেক রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মোর্শেদ খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের বিদেশে অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া, লুৎফজ্জামান বাবর, আলী আসগর লবী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও তার স্ত্রীসহ অনেক বিএনপি নেতার বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন; এই তথ্যের উৎস জানাতে হবে। এরসঙ্গে কারা জড়িত, সে তথ্যও দিতে হবে। ঢালাওভাবে বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সরকারি ব্যাংকের ২৫ শতাংশ ঋণ দুই হাজার ২২ জন লোকের কাছে–এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটাও ওইভাবে সত্য নয়। তারা আমাদের সময়ে ঋণ নেয়নি। ২০২৫ জনের বিষয়ে তথ্যও সঠিক নয়। যে তথ্য আছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়-শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। গণতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কিছুটা (অর্থ) মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে যায়-এটা অস্বীকার করা যাবে না।’

বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘটিত দুর্নীতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ আনা আর প্রমাণিত হওয়া দুই বিষয়। যেসব অভিযোগ দুদকে রয়েছে, তাতে সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ পর্যন্ত দুদকে হাজিরা দিয়েছেন।’

আইন, বিচার বিভাগ এবং দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা এটুকু বলতে পারি, সরকার বা দলের পক্ষ থেকে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কেউ যদি দুর্নীতিপরায়ণ প্রমাণিত হয়; সে মনোনয়ন পাবে না, দল থেকে বহিষ্কার হতে পারে। সে বিষয়ে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা এবং খেলাপিঋণ বা শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে খেলাপি বা শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। যেখানে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪২২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও এর পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে; যা এই সেক্টরের উন্নয়নকেই নির্দেশ করে।’

আব্দুর রাজ্জাকের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৬-০৭ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল চার লাখ ৭২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা এবং এসময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা; যা জিডিপির ৩২ শতাংশ এবং শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৭-১৮ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৩৮  হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা এবং এসময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা; যা জিডিপির ৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং খেলাপি বা শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, ২০১৪-২০১৫ সালের বিএনপি-জামাত জোটের জ্বালাও-পোড়াও না হলে এর পরিমাণ আরও অনেক কম হতো। এছাড়া, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পেতো। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল, তার রেশ শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, মো. আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।

About

Popular Links