Thursday, April 25, 2024

সেকশন

English
Dhaka Tribune

রফতানির দ্বিগুণ আমদানি, চাপের মুখে অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ

আপডেট : ১৭ মে ২০১৮, ০৩:১০ পিএম

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৪ হাজার ৩০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে পণ্য রফতানি থেকে আয়  করেছে ২ হাজার ৭০৯ কোটি  ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩২০ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আমদানির চাপে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, একক মাস হিসাবে গত মার্চ মাসে রফতানিতে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসের তুলনায় এ বছরের মার্চে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। আবার, একই সময়ে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হতে পারে।  তার মতে, আমদানি ব্যয় মেটাতে বড় ধরনের টানাপড়েনে থাকতে হবে সরকারকে। এখন ব্যাংকগুলোতে ৬০ শতাংশের বেশি এলসি খোলা আছে। ফলে আগামী দিনেও আমদানি বাড়তে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে পাঁচ হাজার ২০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় ছিল ৫০১ কোটি ৯১ লাখ ডলার। যদিও ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় ছিল মাত্র ৩৭৬ কোটি ৯ লাখ ডলার। এই হিসাবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১২৬ কোটি ডলার।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৩০৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। যদিও ২০১৭ সালের মার্চে রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৯ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই হিসাবে গত বছরের মার্চের তুলনায় এই বছরের মার্চে রফতানি আয় কমেছে চার কোটি ২৮ লাখ ডলার।

অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও রফতানি কমে যাওয়ার পেছনে নির্বাচনি মৌসুম একটা কারণ বলে মনে করেন ড. আহসান এইচ মনসুর। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এই গবেষকের মতে, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ থেকে টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।  এমনও হতে পারে, কেউ কেউ রফতানি করছেন, কিন্তু রফতানি আয়ের টাকা দেশে আনছেন না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩২০ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই অংক গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আমদানির চাপে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭০৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ৯ মাসের এই ঘাটতি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ গুণেরও বেশি। আর পুরো অর্থবছরের ঘাটতির চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে ১৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। জুনে অর্থবছর শেষে তা ১৪৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। সাধারণত কোনও দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। 

About

Popular Links