সড়ক দুর্ঘটনায় জন্য বাসচালকের শাস্তি হলেও রেললাইনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ট্রেনচালকদের কেন শাস্তি হয়না সে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় শীর্ষক’ এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শাজাহান খান বলেন, “পথচারীদের কারণে যে এক্সিডেন্ট হয়, সেখানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়, এই ক্ষেত্রে অনেকে মারা যায়। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলে তো ড্রাইভারের কোনো শাস্তি হয় না, এই ক্ষেত্রে বাস-ট্রাকের ড্রাইভারের কেন শাস্তি হয়?”
“দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যাত্রী, পথচারী, ড্রাইভার সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো ঘটনা হলেই আমরা বলি, ‘ঘাতক ড্রাইভার হত্যা করেছে’। আসলে কী তাই?", প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বক্তব্যে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনে বাসচালকদের নির্দোষিতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এসময় আদালতের এক রায় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই পরিবহন শ্রমিক নেতা।
তিনি বলেন, "আপনারা লক্ষ্য করুন, মিশুক মুনীর এবং তারেক মাসুদ যে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, সেটার জন্য আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে (চালককে), পাশাপাশি জরিমানাও করেছে। আর একটি গবেষণা সংস্থা ‘এক্সিডেন্ট রিসার্চ রিপোর্টে’ আমরা দেখলাম যে এই ঘটনায় এককভাবে ড্রাইভার দায়ী নয়। তাহলে ড্রাইভার এককভাবে সাজা খাটবেন কেন?"
“আবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) জাহাঙ্গির কবির নানকের ছেলে মারা গেছেন যে দুর্ঘটনায় সেখানে একটি কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়েছে, এখানেই বা ড্রাইভারের দোষ কোথায়?", যোগ করেন তিনি।
এসময় তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের পাশাপাশি যাত্রী এবং পথচারীদের সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আমি বলতে চাই, চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। এখানে রাজেকুজ্জামান রতন (বাসদ নেতা) বলেছেন, বাস আস্তে চালালে যাত্রীরা বকা দেয়, আবার স্পিডে চালালেও বকা দেয়। আস্তে চালালেও দোষ আবার স্পিডে চালালেও দোষ!”
শাজাহান খান আরো বলেন, “অসচেতন পথচারীকে বাঁচাতে গেলে ৫০ জন যাত্রী মারা যাবে, ড্রাইভার এখন কোনটা করবে?”
উল্লেখ্য, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সম্প্রতি ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, যার প্রধান হিসেবে রয়েছেন শাজাহান খান।
এ প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, “সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুপারিশ কখনওই বাস্তবায়ন হয়নি, ১৯৮৩ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে ৮৮টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরাও ১১১টি সুপারিশ করেছি, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করবে কে?"
এসময় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে ‘কো-অর্ডিনেশন সেল’ গঠন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই পরিবহন শ্রমিক নেতা।
মতবিনিময় সভায় শাজাহান খানের সংগঠন ‘সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন’ ১৬টি প্রস্তাব তুলে ধরে। এগুলো উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী সভায় বক্তব্য রাখেন।
