আবাসিক, সিএনজি ও বাণিজ্যিকে নতুন করে আর কোনো গ্যাস সংযোগ দেবে না সরকার। গত মঙ্গলবার (২১ মে) জ্বালানি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সব বিতরণ কোম্পানির দপ্তরে সেটি পৌঁছানো হয়েছে।
আদেশে শিল্প মালিকদের গ্যাস সংযোগ সহজ করতে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিল করেছে সরকার। একইসঙ্গে শিল্প মালিকদের গ্রিডের বিদ্যুতে অভ্যস্ত করতে ক্যাপটিভ সংযোগকে নিরুৎসাহিত করার কথাও সেখানে বলা হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই কমিটির বিষয়ে নানা দিক থেকে অভিযোগ আসছিল। আমি বলছি না, কমিটি কোনো দুর্নীতি করেছে। কিন্তু কমিটির গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ধীরগতির সুযোগ নিয়ে অনেকেই দুর্নীতি করেছে।
তিনি আরও বলেন, এতে শিল্প কারখানার কাজ প্রায় থেমেই গিয়েছিল। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, এই ধরনের কমিটির কারণে আমাদের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, এতে কর্মসংস্থানও কমছে। তাই সংযোগ প্রক্রিয়া দ্রুত করা প্রয়োজন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এখন থেকে শিল্প কারখানায় যে গ্যাস চাইবে, তাকেই দেওয়া হবে। এ বছর না পারলে পরের বছর দেওয়া হবে। কিন্তু কাউকে বসিয়ে রাখা হবে না। আর এতে দুর্নীতিরও কোনো সুযোগ থাকবে না।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন জানায়, উপসচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত আদেশটি গত ২১ মে জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য যে কমিটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে স্ব স্ব কোম্পানির বোর্ড গ্যাসের প্রাপ্যতা অনুযায়ী শিল্পে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেবে। একইসঙ্গে তারা গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লোডও বাড়াবে। তবে সেক্ষেত্রে কিছু নিদের্শনা মেনে চলতে হবে।
আদেশে বলা হয়, নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার কারখানাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা বাড়া এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে উৎপাদন দক্ষতা কম থাকায় ক্যাপটিভ শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। ভবিষ্যতে সিএনজি, গৃহস্থালী ও বাণিজ্যিক শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া আগের মতো স্থগিত রাখতে হবে। তবে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কারাগার এই নির্দেশনার আওতা বহির্ভূত থাকবে। সব বিতরণ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির গ্যাস প্রাপ্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লোড বৃদ্ধি এবং নতুন সংযোগের আবেদন নিষ্পত্তি করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর গ্যাস সংযোগের উদ্দেশে পাইপ লাইন স্থাপনসহ অন্যান্য কার্যক্রম অগ্রাধিকার পাবে।
তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার যা চাইবে আমরা সেভাবেই কাজ করবো। এর আগে থেকে সরকার আবাসিকে গ্যাস না দেওয়ার জন্য মৌখিক আদেশ দিয়েছিল।কিন্তু লিখিত কোনো আদেশ কখনও দেয়নি। এবারই প্রথম লিখিত আদেশ এলো।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গ্যাস সংকটের কথা বলে আবাসিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়।এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে আবার আবাসিক সংযোগ চালু করে।কিন্তু ওই নির্বাচনের পর আবার অলিখিতভাবে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকে নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। তবে এবার লিখিতভাবে আবাসিকে সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেওয়াহলো।