জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও ঝুঁকিমুক্ত নন। জরাজীর্ণ হাসপাতাল ভবনে চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো আহত হচ্ছেন রোগী এবং তাদের স্বজনরা।
সোমবার (২৭ মে) বিকেলে হাসপতালের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয়েছেন দুই শিশুসহ ৩ জন। এ ঘটনার পর ওয়ার্ড থেকে রোগীদেরকে বের করে এনে বারান্দা ও ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো তালাবদ্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৬৮ সালে কোটালীপাড়া উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ৫০ বেডের একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৭২ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়া হাসপাতালটিতে এলাকার জনসাধারণ চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। এর দ্বিতীয় তলায় নারী ও পুরুষ রোগীদের জন্য রয়েছে আলাদা দু’টি ওয়ার্ড। অনেক আগে থেকেই ওয়ার্ড দু’টির জরাজীর্ণ অবস্থা। দেয়ালে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল, প্রায়ই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রোগী, তাদের স্বজন, নার্স ও কর্মচারীরা আহত হচ্ছেন।
হাসপাতাল ভবনের ছাদ খসে পড়েছে রোগীদের বেডে। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন
এরইমধ্যে মঙ্গলবার সেখানে চিকিৎসাধীন মামাকে দেখেতে যায় উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের উজ্জ্বল মোল্লার ছেলে তামিম মোল্লা (৭)। এ সময় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হয় তামিম ও তার খালা এবং খালাতো বোন।
আহত তামিমকেও সেখানেই ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর রোগীদের হাসপাতালের বারান্দা ও ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই গরমে সেখানে কষ্ট পাচ্ছেন রোগীরা।
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে রোগীদের খোঁজ নেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম মাহফুজুর রহমান।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে আমরা আসি জীবন রক্ষা করতে। কিন্তু এখানকার ভবনের বেহাল দশা। এখানে চিকিৎসক, নার্স, রোগীসহ হাসপাতালে আসা সবাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। যে কোনো সময় ছাদ ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
বাধ্য হয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে বারান্দায়। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন
হাসপতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স বর্ণালী রায় বলেন, মঙ্গলবার ওয়ার্ডে কাজ করার সময় ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ওই বাচ্চাটির মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিলো। আমি মাথা চেপে ধরে বাচ্চাটিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেই। এর আগেও ফ্যান পড়ে নার্স আহত হয়েছে। এছাড়া ছাদের পলেস্তার প্রায়ই খসে পড়ে অনেকে আহত হচ্ছেন। ঝুঁকির মধ্যে এখন আরও বেশি কাজ করতে হচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ওই শিশুটিকে সব ধরনের সহায়তার পাশাপাশি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সে শঙ্কামুক্ত। ওয়ার্ডগুলো থেকে রোগীদের বের করে বারান্দা ও ফ্লোরে রাখা হয়েছে। হাসপতালের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে রোগী স্থানাস্তর করতে পারলে এ ঝুঁকি নিরসন হবে বলে জানান তিনি।