চলতি বছর প্রত্যেক ধানচাষীকে ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির দেওয়া হিসেবে চলতি বছর ১ কোটি ৮০ লাখ ধানচাষীর প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা দিলে সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
১১ জুন, মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অর্থনৈতিক পর্যালোচনার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে গিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়।
সংস্থাটির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “রপ্তানি খাত ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দাবি করছে। এটা দিলে সরকারের বাড়তি ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। ফলে রপ্তানি খাতে মোট ভর্তুকি দাঁড়াবে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। আমি কৃষককে ৯ হাজার কোটি টাকা দিতে কোনো সমস্যা দেখি না। এটা দিলে তা যুক্তিযুক্ত ও সাম্যবাদী আচরণ হবে।”
চলতি বছর ধানের দাম নিয়ে কৃষকের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে মন্তব্য করে দেবপ্রিয় আরো বলেন, “এ রকম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার প্রকট চিত্র অন্য খাতে দেখা যায়নি। তাই কৃষক ভর্তুকি দাবি করতেই পারে।”
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন চিত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এ বছর অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে মাত্র তিন মাসে। এটা যে কী এডিপি হবে সেটা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না।”
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত পরিস্থিতিকে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে বলে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, “সরকার যেটা করছে- ডলার বিক্রি করে টাকাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। টাকাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার যৌক্তিকতা নেই। প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে চালু রাখতে হলে টাকাকে এখন নিচে নামিয়ে নিয়ে আনতে হবে। এটা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
আসছে বাজেটে ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে তা আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার ব্যত্যয় ঘটবে।”
এর আগে সিপিডির অর্থনৈতিক পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
১. রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি।
২. অর্থের অপচয় রোধে সরকারি ব্যয় সুশৃঙ্খলভাবে করা।
৩. কর ছাড়ের হিসাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।
৪. সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনা।
৫. প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
৬. ব্যাংক কমিশন গঠন ও বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর সুদের হার সমন্বয় করা।
৭. পুঁজিবাজারের সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া।
৮. সরকারি প্রতিষ্ঠান অডিট করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া।
৯. সামাজিক খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং
১০. টাকার অবমূল্যায়নরোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সংলাপ পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফসহ গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।