ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন যেটুকু অপরাধ করেছেন, তার সে পরিমাণ শাস্তির দাবি করেছেন নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার।
আজ রোববার রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারের পর এমন দাবি করেন নুসরাতের মা।
শিরিন আক্তার বলেন, 'ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তারে আমরা সন্তুষ্ট। আমি চাই সে যতটুকু অপরাধ করেছে, তার সে পরিমাণই শাস্তি হোক। আমি চাই নুসরাতে ভিডিও ধারণ ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারসহ নানা অপ্রচারের সঙ্গে আরও কেউ যদি জড়িত থাকে তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে দ্রুত মামলার বিচার ও রায় যেন হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনিও স্বজন হারানোর ব্যথা বোঝেন। নুসরাতকে হারিয়ে আমি যে অসহনীয় কষ্ট ও দুঃখের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আজকের নুসরাত হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়া দাঁড় করানোর পাশাপাশি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও সেই কষ্ট ভোলার চেষ্টা করতে পারবো।'
নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন , 'আমার বোন তার ওপর বয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সেই দিন থানায় গিয়ে ছিল মাকে সঙ্গে নিয়ে। সেই দিন একজন নারী যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে সোনাগাজি থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়ে আরেক বার পুলিশের হাতে নির্যাতিত হলো তা দেশবাসী দেখেছে। ব্যারিস্টার সমুন সাহেব এই মামলা করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।'
আজ পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রাজধানীর শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার হন মোয়াজ্জেম হোসেন।
প্রসঙ্গত, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়েও দেন তিনি।
ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আত্মসমর্পণও করেননি।
পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে মোয়াজ্জেমকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে'র তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।
এর আগে, গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।