বরগুনায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি জানিয়েছেন, বিয়ের আগে থেকেই তাকে বিরক্ত করত স্বামীর হত্যাকারী নয়ন। হুমকি দিয়ে ফোনে কথা বলতে বাধ্য করা, জোর করে রিকশায় উঠে বসা, এসব কথা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিলো। বিষয়টি অভিভাবকদের জানালে রিফাতের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। তবে আগে থেকেই রিফাতের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো বলেও জানান তিনি।
ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি আরও জানান, বিয়ের পর থেকেই নয়ন বন্ড তাকে বিরক্ত করে আসছিল। বিষয়টি তিনি স্বামী রিফাতকেও জানিয়েছিলেন। ঘটনার দিন (২৬ জুন) সকালে রিফাতের সঙ্গে কলেজে যান মিন্নি। আগে থেকেই কলেজের গেটে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা এসময় রিফাতকে সেখান থেকে টেনে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীদের কাছে নিয়ে যায়। এরপর নয়ন ও রিফাত ফরাজি রিফাতকে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে।
মিন্নি বলেন, “আমি তাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন অস্ত্রের ভয়ে আমাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি।”
স্বামীর হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন- চোখের সামনে স্বামীকে খুন হতে দেখার ভয়াল বর্ণনা দিলেন স্ত্রী মিন্নি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয় আয়শা আক্তার মিন্নির। বুধবার সকাল ১০টার দিকে রিফাত ও মিন্নি বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা রামদা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়। পুরো ঘটনা ধরা পড়ে ক্যামেরায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়- মিন্নি সন্ত্রাসীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার আপ্রাণ বাধা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রিফাতকে রক্ষা করতে পারেনি। হাতে থাকা একটি প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে বারবার আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন রিফাতও। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। সন্ত্রাসীরা তার হাত-পা, বুক, পিঠসহ সারা শরীর কুপিয়ে জখম করে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মিন্নি এ সময় একবার সন্ত্রাসী নয়নকে, আরেকবার নয়নের সহযোগী দুর্বৃত্ত রিফাত ফরাজীকে আটকানোর চেষ্টা করেন এবং চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু, ততক্ষণে রামদার কোপে মারাত্মক আহত হন রিফাত। এরপর তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকালে রিফাত শরীফ মারা যান। এঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ ১২জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চন্দন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।