‘আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।’
১৭ জুলাই, বুধবার আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এভাবেই বিলাপ করতে থাকেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিনা আক্তার।
যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে না নেওয়ায় ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে আলিম পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এর আগে তিনি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষায় অংশ নেন। সেই আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে বুধবার।
ফলাফল বিবরণীতে দেখা গেছে, কোরআন মাজিদ, হাদিস ও উসুলে হাদিস পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। বাকি পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারেননি নুসরাত। যে কারণে অকৃতকার্য সম্বলিত ফল আসে তার।
এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছেই না নুসরাতের স্বজনদের।
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ যেন থামতেই চায় না। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।”
নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে নুসরাতের পরীক্ষার ফল বের করেন। বাড়িতে গিয়ে বোনের পরীক্ষার ফলের কথা জানান মাকে।
আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নোমান। তিনি বললেন, “আমার বোন যদি ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারতো তাহলে ভালো ফলাফল অর্জন করতো।”
আদালতে মেয়ের হত্যাকারীদের দেখে জ্ঞান হারালেন নুসরাতের মা
'শুধু নুসরাত নয়, একাধিকবার তাকে মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি'
‘নুসরাতকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যেতে দেখি’
জানা গেছে, নুসরাত ছাত্রী হিসেবে মেধাবী ছিলেন। ১ ও ২ এপ্রিল দুটি পরীক্ষায় অংশও নেয় সে। পরে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা শোক ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার মাদরাসায় পরীক্ষার ফলাফল জানতে আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও দেখা যায় অশ্রুধারা।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার অনুসারীরা নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।
পরে ৬ এপ্রিল নুসরাতকে কৌশলে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফেনী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে নুসরাতের মৃত্যু হয়।
নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ জন ফেল করে। এ মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ।