যতদূর চোখ যায় দুইদিকে কেবল সাদা পাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল আর পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। যেন অপরুপ এক স্বর্গরাজ্য। সব মিলিয়ে অদ্ভূত এক সৌন্দর্যের ক্যানভাস।
বলা হচ্ছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের কথা। দিন দিন সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগও। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। গড়ে উঠেছে যাত্রীবাহী নৌকার মাঝিদের সিন্ডিকেট। নেই মানসম্মত খাবারের দোকান। টয়লেটের অভাবও ভোগাচ্ছে পর্যটকদের।
সম্প্রতি সাদা পাথর ঘুরে এসে স্থানীয় সাংবাদিক কাউসার চৌধুরী জানান, সাদা পাথর পর্যটন এলাকার পশ্চিমপ্রান্তে ছোট একটি ওয়াশরুম থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ থাকে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই যেখানে-সেখানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দাঁড়িয়ে যান পুরুষ পর্যটকরা। নারীদের পড়তে হয় মহাবিপদে। বিশুদ্ধ খাবার পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
তিনি জানান, সাদা পাথরে মানসমম্মত কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। আছে দুটি মাত্র খাবারের দোকান। ফলে সেখানে যাওয়া বিপুল সংখ্যক পর্যটককে চড়া দামে সেখান থেকে শুকনো খাবার কিনতে হয়। কাপড় পাল্টানোর জন্যও দোকানগুলো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক ফারুক আহমদ জানান, সাদা পাথর এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সরকার নির্ধারিত ১০ টাকার স্থলে ৭০-১০০ টাকা নিচ্ছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মা এন্টারপ্রাইজ।
সাদা পাথরে স্বচ্ছ জলে পর্যটকরা। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউননৌকা সিন্ডিকেটের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, স্থানীয় সিন্ডিকেট নৌকা ভাড়া নেয় ৮শ’ টাকা। একেকটি নৌকার যাত্রী সর্বোচ্চ ৪ জন, সর্বনিম্ন একজন। কোনো পর্যটক একাকী ঘুরতে চাইলে তাকেও নৌকা ভাড়া গুণতে হয় ৮শ’ টাকা।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রতন লাল সাহা জানান, ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ কক্ষের ওয়াশরুমের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, এখন রংয়ের কাজ চলছে। সেখানে বাথরুম-ওয়াশরুমের পাশাপাশি কাপড় পাল্টানোরও ব্যবস্থা থাকছে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটি চালু হলে পর্যটকদের দুর্ভোগের অবসান হবে বলে তিনি দাবি করেন।
সাদা পাথরে পর্যটক দুর্ভোগ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিজেন ব্যানার্জী বলেন, ওয়াশরুমটি শিগগিরই উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ১০ টাকার বিনিময়ে ওয়াশরুমের সব সুবিধা পাবেন পর্যটকরা। কাপড় পাল্টানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা পার্কিং ইজারা নিয়েছে তারাই এটিও ইজারা নিয়েছে।
খাবারের দাম সম্পর্কে ইউএনও বলেন, শুকনো খাবার হয়তো একটু বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় দরিদ্র লোকজন এসব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবুও বিষয়টি দেখবেন জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যটকদের জন্যে আমরা সুন্দর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ছবি: ঢাকা ট্রিবিউনভারত থেকে নেমে আসা সীমান্ত নদী ধলাই নদীর জিরো পয়েন্ট এলাকা স্থানীয়ভাবে ‘সাদা পাথর’ এলাকা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি জায়গাটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাটি দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর পানির সঙ্গে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ।
মজুদ পাথর পঞ্চাশ বছর ব্যবহার করা যাবে, এমন হিসেব ধরে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। বৃটিশ রোপওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এর আওতায় ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ রোপওয়ের জন্য নির্মাণ করা হয় ১২০টি টাওয়ার এক্সক্যাভেশন প্ল্যান্ট। তবে সংস্কারের অভাবে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে রোপওয়েটি বন্ধ রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জের উৎসমুখ সাদাপাথরে সবসময়ই চেরাপুঞ্জি থেকে স্বচ্ছ নীল ও ঠাণ্ডা পানি নেমে আসে।