যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে হত্যার শিকার ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পড়ার টেবিল এখনও গোছালো ও পরিপাটি। পড়ার টেবিলের বইপত্র প্রতিদিন গুছিয়ে রাখেন মা শিরিন আক্তার। নুসরাত যে ঘরে থাকতো সেই ঘরে ঢুকতেই দরজার ডান পাশে পড়ার টেবিল। পাশের বিছানাও সাজানো গোছানো। শখের ঘড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাজগোছের জিনিসপত্র আগের মতোই রয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকালে ফেনীর সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে গেলে এ দৃশ্য দেখা যায়।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার মেয়ের পড়ার টেবিল দেখিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, নুসরাতের পড়ার টেবিল সব সময় এমন গোছানোই থাকতো। বিছানাও সে এমন গুছিয়ে রাখতো। পড়াশোনার ব্যাপারে সে ছিল অনেক সিরিয়াস। লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল ওর। ঘাতকেরা সেই সুযোগ দিল না নুসরাতকে। বলেই কেঁদে ওঠেন নুসরাতের মা। ঘরে তার ব্যবহৃত স্টিলের আলমিরা আগের মতোই আছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অর্জন করা বেশ কিছু ক্রেস্ট আলমিরায় সাজিয়ে রাখা আছে আগের মতোই।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যায়। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।