নারায়ণগঞ্জে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেমের ছেলে ও গুলশান ক্লাবের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের (৩৯) গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও গুলি উদ্ধার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশনের সামনে তার গাড়ি থেকে এসব মাদক উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ।
এই ঘটনায় শনিবার দুপুরে শওকত আজিজ রাসেলকে প্রধান আসামি করে ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় শওকত আজিজ রাসেলের গাড়ি জব্দ করা হয়। ওই গাড়ি থেকে ২৮ রাউন্ড গুলি, ১২শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশী মদ, ২৮ ক্যান বিয়ার, নগদ ২২ হাজার ৩৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এসময় গাড়িতে থাকা শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল, ছেলে আনাব আজিজ ও গাড়ি চালক সুমনকে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ আরও জানান, তাকে ঢাকার বাসায় নামিয়ে দেওয়ার পর গাড়ি নিয়ে ফেরার সময় শুক্রবার দিবাগত আনুমানিক রাত ১টার দিকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় মগবাজার ফ্লাইওভারের কাছাকাছি পৌঁছালে রাস্তায় যানজটে পড়েন তার গাড়িচালক জুয়েল মিয়া।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের এসপি হারুন অর রশিদ। ঢাকা ট্রিবিউন এসময় জুয়েল মিয়া হর্ন দিলে সামনে থাকা সাদা রঙের একটি গাড়ির ভেতর থেকে একজন লোক এসে গাড়ির বাম পাশের গ্লাসে জোরে আঘাত করে গালিগালাজ করতে করতে বলেন "আমি পারটেক্স রাসেল, গাড়ির দরজা খোল।" এর পরিপ্রেক্ষিতে এসপি'র গাড়ির চালক গাড়ির গ্লাস খুলে প্রতিবাদ করলে ওই ব্যক্তি তার মাথায় পিস্তল তাক করে ধরে। আসলে এই ব্যক্তিটি ছিলেন শওকত আজিজ রাসেল; যিনি পরে জুয়েলকে পুলিশের লোক বলে বুঝতে পারেন এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। এরপর পুলিশ সুপারের গাড়িটি রাসেলের গাড়িটিকে অনুসরণ করতে শুরু করে। একপর্যায়ে রাসেলের গাড়িটি নারায়ণগঞ্জের দিকে আসতে থাকলে এসপি'র দেহরক্ষী কনস্টেবল নাজমুল ইসলাম ঘটনাটি ডিবি পুলিশের এসআই আবদুল জলিলকে অবহিত করেন। আবদুল জলিল ফোর্স নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে গাড়িটির গতিরোধ করে তল্লাশি করে। ওই সময় গাড়ির ভেতর থেকে ওই মাদক ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এসময় গাড়িতে রাসেলের স্ত্রী ও পুত্র থাকলেও তিনি নিজে ছিলেন না।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তলের গুলি ও মাদক শওকত আজিজ রাসেলের বলেছে নিশ্চিত করেছে গাড়িচালক সুমন। প্রধান আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে ধরার জন্য তার বাসা, গুলশান ক্লাব ও ঢাকার একটি ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এদিকে এই ঘটনায় শনিবার সকালে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ছুটে আসেন পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেম, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমএ হাশেমের স্ত্রী সুলতানা হাশেম। ডিবি কার্যালয়ে এসে শওকত আলী রাসেলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশকে সহায়তার আশ্বাস ও মুচলেকা দিয়ে ফারাহ রাসেল ও আনাব আজিজকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান এম এ হাশেম।