মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড ঝর্ণার পানিতে বিভিন্ন জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী মরে ভেসে উঠেছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাত থেকে ঝর্ণার পানিতে মাছ মরতে শুরু করে। মৎস্য বিভাগের ধারণা পানিতে পাহাড়ি বিষলতা (এক ধরনের বিষাক্ত গাছ) প্রয়োগ করার কারণে এমনটি হতে পারে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাধবকুণ্ড ঝর্ণায় এলাকায় রবিবার থেকে পর্যটক, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন পানিতে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে দেখেন।
মৃত মাছ ও জলজপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি বামাস মাছ, কাঁকড়া, পুঁটি, ব্যাঙ, পাহাড়ি চিংড়ি, পিপলা, ছোট বাইন, সরপুঁটি ইত্যাদি। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মারা যাওয়া বামাসের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হতে পারে। পরে স্থানীয় লোকজন ও মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মীরা মরা মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী পানি থেকে তুলে সরিয়ে ফেলেন।
মাধবকুণ্ড ঝর্ণায় মরে যাওয়া বামাস মাছ। ঢাকা ট্রিবিউন
এ ঘটনায় সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে মৎস্য বিভাগের লোকজন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় মৎস্য বিভাগ পানির প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পেয়েছেন। তবে তাদের (মৎস্য বিভাগের) ধারণা, মাছ মারার জন্য কেউ পানিতে পাহাড়ি বিষ লতা প্রয়োগ করেছে। ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মাধবকুণ্ড ঝর্ণার পানি ছড়া দিয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওরে পড়ছে। পানি বিষাক্ত হলে হাওরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। মারা যেতে পারে হাওরের মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী।
এদিকে ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা রায়হান আহমদবলেন, “ঝর্ণার পানিতে নামতেই নাকে গন্ধ লাগছে।”
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এলাকার ব্যবসায়ী জহির আহমদ ও কবির আহমদ বলেন, “রবিবার থেকে মাধবকুণ্ডের পানিতে মরা মাছ ভাসতে দেখি। এই পানি হাকালুকি হাওরে যাবে। সেখানেও মাছ মরবে। এই পানি আবার অনেকে খেয়ে থাকে। পানিতে বিষ দেওয়া হলে মানুষ ও পশুপাখির ক্ষতি হবে।”
মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণীর মরদেহ পচে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ঢাকা ট্রিবিউন
মাধবকুল্ড ইকোপার্কের পাশে পান পুঞ্জিতে কর্মরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দা ফিলা খংলা বলেন, শনিবার সকাল থেকে দেখছি ঝর্ণার পানিতে মাছ মরা। পানিতে দুর্গন্ধ। বেশ কয়েকটা মরা বামাস মাছ তুলেছি। কাঁকড়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছও ছিল।
বড়লেখা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সোমবার রাতে মোবাইল ফোনে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “খবর পাওয়ার পর পানির কোয়ালিটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে পানির কোয়ালিটি প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। আমাদের ধারণা পাহাড়ি বিষলতা কেউ পানিতে দিয়েছে। যার কারণে মাছসহ অন্যান্য জলজ জীব মারা যাচ্ছে। আমরা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে পানিতে ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করছি। আশা করছি ওষুধ দেওয়ার পরে পানির বিষাক্ততার প্রভাব কমে যাবে।”
বড়লেখা রেঞ্জেরবন বিভাগের বিট অফিসার শেখর রঞ্জন বলেন, “মাছ মরার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি। কি কারণে জলজজীব মারা গেছে, তা এখনো খুঁজে পাইনি। তবে কারণ জানতে অনুসন্ধান চলছে। পাশাপাশি মৎস্য বিভাগও কাজ করছে।”