নারায়ণগঞ্জের সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে থাকা রূপগঞ্জের ঢাকা-বাইপাস মহাসড়কে গোপন সুড়ঙ্গ কেটে ড্রেজার বসিয়েছে অসাধু বালি ব্যবসায়ীরা। কোনো স্থানে রাতের আঁধারে আবার কোনো স্থানে দিন-দুপুরে বোরিং করে প্রকাশ্যে কাটা চলছে মহাসড়ক। এতে যেমন হুমকির মুখে পড়ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ফসলি জমি। অন্যদিকে, মহাসড়ক ভেঙ্গে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা এলাকায় মায়ার বাড়ি থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ২০টিরও বেশি ড্রেজার পাইপ। এসব পাইপ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সুড়ঙ্গ বা গুহা তৈরি করে বসানো হয়েছে। যার কোনোটিরই অনুমোদন নেই বলে জানান স্থানীয় প্রশাসন। গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে কালাদি বড় মসজিদের পাশে স্থানীয় একটি মহলকে মহাসড়ক কেটে নতুন সুড়ঙ্গ তৈরি করতে দেখা গেছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগকে জানানো হলেও তারা দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রধান প্রকৌশলী এনায়েত কবীর ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “রাস্তা যেহেতু সড়ক ও জনপদের তাই আমাদের কিছু করার নেই।”
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমকে ঘটনাস্থলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলামকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোনো বালি ব্যবসায়ী বা শ্রমিকদের হাতে নাতে ধরতে না পারায় তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহরকে ঘিরে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাশে রয়েছে নামে-বেনামে অনুমোদনহীন বেশ কিছু আবাসন প্রকল্প। তাদের প্রকল্পে বালি ফেলতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে এসব অসুদপায় অবলম্বন করছে। তাদের মধ্যে কালাদি এলাকার খালেক মেম্বারের ছেলে মনির হোসেন, জলিল মিয়ার ছেলে নয়ন, সোবেদ আলীর ছেলে মোজাম্মেলসহ একটি চক্র চুক্তিভিত্তিক এসব সুড়ঙ্গের কাজ করে আসছে বলে রয়েছে অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে স্থানীয় প্রভাবশালী নেত্রী সামসুন্নেহারসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অস্ত্রসহ হামলা-মামলা করে বলে জানান স্থানীয়রা।
তবে বালি ব্যবসায়ীদের দাবি সড়কে সুড়ঙ্গ করতে অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসন তা অনুমোদন করেনি বলেও স্বীকার করেন তারা। এদিকে এসব বিষয়ে প্রশাসনকে জানালেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।
সূত্র আরও জানায়, মহাসড়কে সুড়ঙ্গ করার বিষয়টি স্থানীয় ট্রাফিক, থানা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে পড়লেও কোনো লিখিত অভিযোগ না করার অযুহাতে ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।
এদিকে, মহাসড়কে সুড়ঙ্গ করে ড্রেজার পাইপ বসানোয় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, বাঁধ হিসেবে কাজ করা ঢাকা বাইপাস সড়কের এ অংশে ৬ কিলোমিটারে রয়েছে ২০টির বেশি ড্রেজার পাইপ। এসব পাইপ দিন-দুপুরে অনুমোদন ছাড়া বসালেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে বন্যায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় যেমন ধস নামতে পারে তেমনই বাঁধের অধীনে লাখো পরিবারের নিরাপত্তাও পড়তে পারে হুমকিতে।
জানতে চাইলে কাঞ্চন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, “যারা বালি ব্যবসা করে তারা আবাসন কোম্পানির কাছে চুক্তি মোতাবেক বালি ভরাট করে। তবে মহাসড়কে কে বা কারা সুড়ঙ্গ করছে তা খতিয়ে দেখে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, “আবাসন কোম্পানিগুলোর লোকজন একদিকে জোরপূর্বক বালি ফেলে সাধারণদের হয়রানি করছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করছে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।”
সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিভাগী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এ ধরনের কাজে কোনোমতেই সওজ অনুমোদন দেয় না। যারা অনুমোদনের কথা বলে তারা নিছক ভুল তথ্য দিচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জড়িতদের আইনের আঁওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”