গত সোমবার একটি অনলাইন গণমাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উন্নয়ন প্রকল্পে ১১ হাজার টাকায় দু’টি কলম কেনাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের বিষয়বস্তুকে “কাল্পনিক” বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এমন দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ‘‘গ্রন্থাগারের উন্নয়ন প্রকল্পে ১১ হাজার টাকায় দু’টি কলম কেনার ঘটনা একটি কাল্পনিক গল্প। এই ধরনের কোনো কলম কেনা হয়নি। তাই এর খরচ দেখানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।’’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘প্রকল্পের কাজে যেসব বলপেন কেনা হয়েছে সেগুলোর দাম দশ থেকে সর্বোচ্চ বিশ টাকা। আর মাঝেমধ্যে যেসব জেলপেন কেনা হয়েছে সেগুলোও প্রতিটি সর্বোচ্চ পঞ্চাশ টাকা মূল্যের।’’
বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলছেন দাবি করে অধ্যাপক সামাদী আরও বলেন, ‘‘উপাচার্য দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা কমিয়ে নিজের মেয়ে ও মেয়ে জামাইকে নিয়োগ দিয়েছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ অপচয় করেছেন, সম্প্রতি উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস হয়েছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষকদের একাংশ বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এই আন্দোলনে আমিও যুক্ত। সম্প্রতি আমরা উপাচার্যের দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ পাঠিয়েছি। তাই উপাচার্য প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন কাজ করছেন।’’
প্রসঙ্গত, গ্রন্থাগারের কার্যক্রম ও সেবামান উন্নয়নের লক্ষ্যে হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) অর্থায়নে ২০১৪ সালের ১ জুলাই ‘‘অটোমেশন অ্যান্ড ডিজিটালাইজেশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি’’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ওই সময় গ্রন্থাগারের প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক সামাদী। তবে ২০১৭ সালের ১৪ জুন তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক সামাদী বলেন, আমি প্রকল্পটির সাব-প্রজেক্ট ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলাম। প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্নও হয়। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাকে প্রশাসক থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেন এবং সাব-প্রজেক্ট ম্যানেজার থেকে পদত্যাগের মৌখিক নির্দেশ দেন। ওই সময় দু’টি স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপাচার্য ২০১৭ সালের ১৭ জুন সিন্ডিকেটের ৪৭১তম সভায় আমার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে হেকেপ থেকেও ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রকল্পের যাবতীয় কাগজপত্র তদন্ত করেন। প্রকল্পের কাজে কোনো আর্থিক বা প্রক্রিয়াগত অনিয়ম হয়নি বলে প্রতিনিধি দল তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটি তাদের তদন্ত চালিয়ে যায়। এই কমিটি গত বছরের ৫ই মে ৪৯০তম সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্যের কাছে তাদের রিপোর্ট উত্থাপন করেন। কিন্তু রিপোর্টটি উপাচার্যের মনপুত না হওয়ায় উপাচার্য ওই সভাতেই আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যেখানে হেকেপ কোনো অনিয়ম পায়নি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কমিটি দিয়ে তদন্ত চালানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে সুলতান-উল-ইসলাম, এসএম এক্রাম উল্যাহ, মিজানুর রহমান, মোস্তফা তারিকুল আহসান, বিশ্বজিৎ চন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।