নাট্যকার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন সেলিম আল দীন। বাংলা নাটকের শেকড়ের সন্ধানে তিনি নাটকের আঙ্গিক ও ভাষার ওপর চালিয়েছেন হাজারও নিরীক্ষা, করেছেন গবেষণা। পাশ্চাত্য শিল্পের সব বিভাজনকে বাঙালির সহস্র বছরের নন্দতত্ত্বের আলোকে অস্বীকার পূর্বক বাংলা সাহিত্যে এক নবতর শিল্পরীতির প্রবর্তন করেন তিনি। বাংলা নাটকে অসামান্য অবদানের জন্য দেশে বিদেশে বহুবার সংবর্ধিত এবং জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব।
একজন নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও সমকালীন শিল্পধারায় নতুন “নন-জেনরিক” শিল্পধারার প্রবর্তনে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় বিভিন্ন রচনায় তিনি নিজেকে- ‘‘শিল্পাদর্শে দ্বৈতাদ্বৈতবাদী’’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এই দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্বের প্রবক্তার দ্বাদশ প্রয়াণ দিবস আজ (১৪ জানুয়ারি)। দিনটিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেছে বাংলার শ্রেষ্ঠ এই নাট্যকারকে। দিবসটি উপলক্ষে দুদিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিভাগটি।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে ‘‘এইতো আমি শিল্পনিখিলে দ্বৈত-অদ্বৈতের মিলে’’ প্রতিপাদ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম প্রয়াণ দিবসের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী ভাষণে উপাচার্য বলেন, “রবীন্দ্রত্তোর সময়ের কালজয়ী নাট্যাচার্য ছিলেন সেলিম আল দীন। তিনি বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। অনেকেই বলে থাকে সেলিম আল দীনের লেখার ভাষা দুর্বোধ্য। আসলে তার লেখা ভাষা দুর্বোধ্য নয়। এই নাট্যাচার্যের চর্চা করলে আমাদের নাটকে ও শিল্পবোধের বিকাশ ঘটবে। আমরা আজ তার দ্বাদশ প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উপাচার্য ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন প্রয়াণ দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল আহমেদের নেতৃত্বে পুরাতন কলা ভবন থেকে একটি স্মরণ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ যাত্রায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন নাট্য সংগঠনগুলো অংশ নেয়।
১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজীতে জন্ম কালজয়ী এই নাট্যব্যক্তিত্বের। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তার হাত ধরেই ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বিভাগটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।