রাজধানী ঢাকাসহ দেশের একাধিক জেলায় ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত একটি প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। তারা হলেন- কুমিল্লার দাউদকান্দি মুরাদনগর এলাকার ইউপি সদস্য মো. মমিনুল ইসলাম (৪৬), একই এলাকার মো. ইদ্রিস মিয়া (৪৪), আবু বক্কর সালাফী (৪৩) ও দারোরা বাজার গ্রামের রুবেল (২৪)।
র্যাব জানিয়েছে, এই চক্রের মূল হোতা মো. ইদ্রিস। “পশু ভাই” নাম এক ভারতীয় নাগরিকের কাছ থেকে জালিয়াতির কৌশল শিখেছে সে।
তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে অস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ ভুয়া সিল, লেনদেনের রশিদ ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার গৌরিপুর বাজার থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-১১ সদর দপ্তরের একটি দল। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো. আলেপ উদ্দিন জানান, অভিযুক্তরা একটি সংঘবদ্ধ ব্যাংক জালিয়াতি চক্রের সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে তারা অভিনব কৌশলে ব্যাংকের ভাউচার জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। এই চক্রের মূল হোতা মো. ইদ্রিস। বছর তিনেক আগে একটি হোটেলে চাকরি করার সময় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভারতীয় সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও আন্তর্জাতিক জাতিয়াত চক্রের সদস্য “পশু ভাইয়ের”।
র্যাব আরও জানায়, পশু ভাই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ হ্যাক করে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন ও রেমিট্যান্স জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তার কাছ থেকে ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে এলাকার ইউপি সদস্য মমিনুল ইসলাম ও অন্য দু'জনকে সঙ্গে নিয়ে জালিয়াত দল গড়ে তোলেন ইদ্রিস মিয়া।
চক্রটি অগ্রণী, সোনালী, পূবালী, ইসলামী, ডাচ বাংলা ও এনসিসি ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ভুয়া ভাউচার, কর্মকর্তাদের ভুয়া সিল, স্বাক্ষর, পিন নম্বর এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি তৈরি করে ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে শুরু করে।
২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের বুড়িচং শাখায় বিদেশ থেকে পাঠানো গোপন নম্বরের টাকা জালিয়াতি করে তুলতে গিয়ে হাতেনাতে আটক হয়েছিলেন ইদ্রিস মিয়া। তাকে পুলিশেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আবারও একই কাজে নেমে পড়েন তিনি।
গত চার বছরে চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথ থেকে কোটি টাকারও বেশি অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির পাশাপাশি ছিনতাই, সন্ত্রাস ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন ওই চার জন। তাদের প্রত্যেকের নামেই বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের ওপর বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব-১১।