আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, হোটেলে গিয়েছিলাম ভাত খেতে। ১০ টাকায় ডাল-ভাতও হয়না, তাই চলে এসেছি। পরিস্থিতি আর নিয়তি এখানে নিয়ে এসেছে।
পৌঁছেছেন জীবন সায়াহ্নে, শরীরটা যেন বয়সের ভারেই ন্যুহ। উপার্জন বলতে তেমন কিছু নেই, নেই কোনো সহায়-সম্বলও। তাই বয়স্ক ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বলাবাড়িয়া গ্রামের মানিক চন্দ্র সানা।
তার জন্ম ১৯৩১ সালের ২২ অক্টোবর। সেই হিসেবে তার বয়স প্রায় ৮৮ বছর। দু’বছর ধরে সমাজসেবা অফিসে ধর্ণা দিয়েও বয়স্ক ভাতা জোটেনি তার ভাগ্যে।
রবিবার (১২ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী চন্দ্র মল্লিকা সাহানীকে খুঁজে না পেয়ে অফিস ঘুরে তার বাসায় যান। সেখানেও দেখা না পেয়ে হতাশায় ঘাসের ওপর শুয়ে পড়েন মানিক।
মানিক জানান, ৮০-র দশকে তিনবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ছিলেন তিনি। তিন ছেলের মধ্যে দু'জন থাকে ভারতে। এক ছেলে সামান্য জমিতে মাছের ঘের করে। ভাইরাসের কারণে ব্যবসায় লোকসানের শিকার হয়ে সেও নিঃস্ব। তাই বাধ্য হয়ে প্রায় দু’বছর ধরে সমাজসেবা অফিসে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ঘুরছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, অফিস থেকে দু’বার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি নেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাননি। প্রখর রোদের মধ্যে সাত কিলোমিটার হেঁটে অফিসে এসেছিলাম ১০টি টাকা হাতে নিয়ে। কড়া রোদে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মাথা ঘুরতে থাকায় চন্দ্র মল্লিকার বাসার সামনে ঘাসের ওপর শুয়ে পড়েছিলাম।
আক্ষেপের সুরে মানিক বলেন, হোটেলে গিয়েছিলাম ভাত খেতে। ১০ টাকায় ডাল-ভাতও হয়না, তাই চলে এসেছি। পরিস্থিতি আর নিয়তি এখানে নিয়ে এসেছে। অসহায় ছেলের বোঝা হয়ে থাকতে বড় কষ্ট হয়।
অশীতিপর বৃদ্ধের এমন পরিস্থিতি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাংবাদিকদের নজরে এলে তারা ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানান।
চেয়ারম্যান বলেন, তালিকা জমা দেওয়ার পর মানিক চন্দ্র সানা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তার তালিকায় মানিকের নাম তালিকাভূক্ত করেন নি। এর পরের তালিকায় অবশ্যই তার নাম দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী হুমায়ুন কবীর জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ওই বৃদ্ধের নাম আমাদের কাছে দেননি। আমরা চেষ্টা তাকে কোনো একভাবে তাকে সহযোগিতা করার।
মতামত দিন