ফেনীর এসপি হিসাবে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, 'কর্মময় সময় স্যারের সহকর্মী সুলভ আচরণে আমরা জেলা পুলিশ সন্তুষ্ট ও উনার কাছে কৃতজ্ঞ।'
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির দায়ে অভিযুক্ত ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
আজ সোমবার বিকাল ৫টার দিকে তাকে ফেনী পুলিশ লাইনের অডিটরিয়ামে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নতুন এসপি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণকারী কাজী মনিরুজ্জামান এবং জেলা পুলিশের অফিসারসহ বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) বক্তব্য দেন।
এর আগে সোমবার সকালে জেলা পুলিশ প্রশাসনের ফেসবুক পেজে ‘ফেনীর সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার মহোদয়ের বিদায়ী সংবর্ধনা'-শিরোনামে একটি ব্যানার পোস্ট করা হয়। ব্যানারটি মুহুর্তে ভাইরাল হয়।
এদিকে ফেনী পুলিশের ফেসবুকে ওই ব্যানারটি প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেখানে ইমন নামের এক ব্যক্তি মন্তব্য বলেন, 'আফসোস, এই জন্যই দেশটার আজ এই অবস্থা। একজন কলুষিত অফিসার, যে কিনা একটি হত্যাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার দায়ে শাস্তি স্বরুপ ফেনী ছাড়ছেন, আর তাকেই দিচ্ছেন সংবর্ধনা। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি।'
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের আরেকজন লিখেছেন, 'ওরে সংবর্ধনা দিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।'
সামসুল আলম নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, 'এখনো সুযোগ্য পুলিশ সুপার বলতেছে। এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই না।'
সোনাগাজি পৌর কাউন্সিলর শেখ মামুন বলেন, 'যেখানে খোদ পুলিশ বিভাগ তাকে নুসরাত হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির দায়ে অভিযুক্ত করে শাস্তি দিয়েছেন। সেখানে ফেনী পুলিশের এই সংবর্ধনা দিয়ে দেশবাসীকে কি মেসেজ দিচ্ছেন-তাঁরা অভিযুক্তদের পক্ষে আছেন? আমরা সাধারণ মানুষরা অযোগ্য, আর অভিযুক্তরা, শাস্তিপ্রাপ্তরা সুযোগ্য। ধিক্কার সেই সব মানুষদের যারা দেশ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যঙ্গ করছেন।'
এই প্রসঙ্গে ফেনীর এসপি হিসাবে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, 'ফেনীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে প্রায় দুবছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। এরইমধ্যে তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান। রীতি হিসাবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্যারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এটি তেমন কোনো বড় ঘটনা নয়। কর্মময় সময় স্যারের সহকর্মী সুলভ আচরণে আমরা জেলা পুলিশ সন্তুষ্ট ও উনার কাছে কৃতজ্ঞ।'
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পায় পুলিশ সদর দফতর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন গত ৩০ এপ্রিল রাতে পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এতে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফ ও এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহম্মেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অভিযুক্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহম্মেদকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
মতামত দিন