দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথ বন্ধ করে শিক্ষার্থী ব্যতীত কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে দু'দিন বন্ধের পর আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে পটচিত্র প্রদর্শন ও সংহতি সমাবেশ করেন তারা।
এদিকে, আন্দোলনকে ঘিরে আবারও ক্যাম্পাসে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জাবি প্রশাসন। এদিন সকালের দিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীরা বাধা দিলে কার্যক্রম স্থগিত করে প্রশাসন।
উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন সকাল ১১টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ভবনের সামনে ‘‘উপাচার্যের দুর্নীতি’’, ছাত্রলীগের হামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আঁকা নতুন ও পুরনো পটচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন - ভিপি নুর: প্রত্যেক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া শুনে অবাক হই
সকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে চললেও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বের হয়ে যেতে বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমিসহ অনেকেই সকাল থেকে কাজ করছিলাম। আন্দোলনকারীরা দুপরের দিকে এসে আমাদেরকে বের করে দিয়েছে।’’
এরপর বিকেল চারটায় আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে ঢাকা থেকে যাওয়া অতিথিদের নিয়ে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংহতি সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ‘‘জাবি উপাচার্যের বক্তব্যেই প্রমাণ হয় তিনি দুর্নীতি করেছেন। আর সব কিছু বাদ দিলাম সেদিন শিক্ষকদের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হলো সেজন্যই তার পদত্যাগ করা উচিত।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে যখন আন্দোলন হচ্ছে, তখন ছাত্রলীগ গিয়ে হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনার পরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আশ্রয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যখন অভিযুক্ত উপাচার্যের পক্ষ নেয় সেটি খুবই দুঃখজনক হয়ে ওঠে।’’
জাবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল বন্ধ, ক্লাস বন্ধ, অনেকগুলো পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল সেগুলোও বন্ধ। শিক্ষার্থীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলো এর জন্য কে দায়ী? আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমরা সবাই জানি এজন্য দায়ী বর্তমান উপাচার্য।’’
সংহতি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও জহিরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মোহাব্বত হোসেন খান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, রাখাল রাহা (রাষ্ট্রচিন্তা), গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
মতামত দিন