‘মানুষতো সব বাইরেই। এ অবস্থায় ঘরে ঘরে গিয়ে বাতি জ্বালিয়ে মানুষ খুঁজতে হবে’
“ঘরে কোনো খাবার নেই। মাছ, শাক-সবজিও শেষ। তাই ধীরে ধীরে বাজারে এলাম। কিন্তু বাজারে এসেই মনে হলো, আমি একাই বাড়িতে ছিলাম। হোম কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে মানছি। কিন্তু সবাই বাইরে স্বাভাবিক চলাফেরা করছে। বাজার, সড়ক, ছোট ছোট মাঠ মানুষে ভরা। গলিতে যুবকদের আড্ডা জমজমাট।”
এভাবেই খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া তালতলা এলাকার চিত্র তুলে ধরলেন মো. ইয়াসিন আরাফাত নামের এক যুবক। তার কথার মাধ্যমেই ফুটে উঠল করোনাভাইরাসে প্রার্দুভাব ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব তৈরিতে চরম উদাসীনতার চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশের মতো খুলনা মহানগরীতেও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সতর্কতার অংশ হিসেবে অবাধ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মানছেন না কেউই। প্রশাসনও এ বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে।
ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর জোড়াকল বাজার, মিস্ত্রীপাড়া বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারি বাজার, বড় বাজার, সন্ধ্যায় ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারসহ অধিকাংশ বাজারে উপচে পড়া ভিড়। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা বাজার নিতে এসেছে এসব জায়গায়। গায়ে গা ঘেঁষে কেনাকাটা করছেন। মাঝে ১০ ইঞ্চি জায়গাও নেই। মাস্ক ব্যবহার করেছেন না। হাতে গ্লাভসও নেই। দোকানি ও ক্রেতার মাঝখানেও দূরত্ব রক্ষা করা হচ্ছে না।
মিস্ত্রীপাড়া বাজারে আসা ইব্রাহিম মোড়ল বলেন, তিন ফুট দূরত্বে থাকার বিষয় জানি। তবে, দাঁড়ানোর পর পাশে আরও একজন দাঁড়ালে তাকেতো দুরে সরে যেতে বলতে পারি না।
আনছার উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ঘুরে ঘুরে বাজার করতে হচ্ছে। যে পরিমাণ মানুষ, তাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন।
মুসলমানপাড়ার চা দোকানি মনোয়ারা বেগম বলেন, আগে সকাল-বিকেল পুলিশ আসতো। গত দু’দিন থেকে পুলিশ আসছে না। তাই দোকান খুলেছি। বেচা-বিক্রিতো ভালই হচ্ছে। মানুষতো সব বাইরেই। এ অবস্থায় ঘরে ঘরে গিয়ে বাতি জ্বালিয়ে মানুষ খুঁজতে হবে।
হোম কোয়ারেন্টিন কার্যকর না হওয়ার বিষয় খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোস্তাক আহমেদ তার ফেসবুক পেজে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “পুলিশ দেখলেই পালিয়ে যায়, আবার পুলিশ চলে গেলে ২০/৩০ জনের আড্ডা হয় প্রকাশ্যে। কিভাবে সম্ভব।”
তিনি বলেন, “আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। সেদিকে কারো মাথা ব্যাথা নাই। অথচ আইন অমান্য করে দলবেধে রাস্তায় ঘোরাঘুরিকারীদের পক্ষে ফেসবুকে সমর্থন চলছে।”
এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, “পুলিশ সব এলাকার দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলছে। তবুও চায়ের দোকানদাররা চোখ এড়িয়ে দোকান খোলা রাখছে। যা নিয়ে আমরাও হতাশ হয়ে পড়ছি।”
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমদ জানান, এমন দশা চলতে থাকার কারণে আগামী সপ্তাহে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। এখনই হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। সকলকে সরকারের বর্তমান নিয়মটা মেনে চলার জন্য আহবান জানান তিনি।
মতামত দিন