মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে
শরীরে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে একে একে গেছেন পাঁচটি হাসপাতালে। তবুও জসিম উদ্দিনকে (৫২) মরতে হয়েছে বিনা চিকিৎসায়। সারাদিন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে রবিবার (১২ এপ্রিল) দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি।
মৃত জসিম উদ্দিন থাকতেন ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায়। কাঁচামালের ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি।
এদিকে, করোনাভাইরাসে তার মৃত্যু হয়েছে, এমন সন্দেহে রবিবার রাতেই তার বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা।
স্বজনরা জানান, জন্মগতভাবেই জসিম হাঁপানি ও অ্যাজমায় আক্রান্ত ছিলেন। গত দুই বছরে দুই বার স্ট্রোক করায় ঠোঁট বেঁকে যাওয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। রবিবার সকালে অসুস্থ্ হয়ে পড়লে দুপুরে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাদের অভিযোগ, ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে “করোনা আক্রান্ত রোগী” আখ্যা দিয়ে হাসপাতাল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ বক্তব্য ভুল দাবি করে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন।
তাদের অনুরোধে মন গলেনি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। অবশেষে রাত নয়টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। স্বজনরা তখন তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও জসিমকে “করোনাভাইরাস আক্রান্ত” সন্দেহে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য বলেন। ততক্ষণে রাত ১১টা।
কুর্মিটোলায় পরীক্ষার পর জসিমের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ না পাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তার স্বজনরা আরও জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ থেকে ৬০১ নম্বরে ভর্তি করা হলেও ইউনিট ম্যানেজার তাদেরকে ভর্তি না রেখেই হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। এরপর দিবাগত রাত সোয়া ২টার পরে বাবুবাজার এলাকার ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। রাত ৩টার দিকে জসিমের মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে “স্ট্রোক করে” মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে মহানগর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল কাদের নাজিম তাদের হাসপাতাল থেকে রোগীকে বের করে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, “জসিম উদ্দিনের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ ছিল কি না, তা আমার জানা নেই। তবে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেফারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। জোর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ সত্যি নয়।”
এদিকে করোনায় আক্রান্তের গুজবে রাতেই ওই বাড়িটি লকডউন করে দেয় সাভার উপজেলা প্রশাসন।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর তার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ পাওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া, তখন ওই রোগীর আইসিইউ’র প্রয়োজন ছিল যা আমাদের এখানে নেই। তবে সেখানে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থাকার লক্ষণ মেলেনি। তাদের বাড়ি থেকে লকডাউন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।”
মতামত দিন