ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা ন্যূনতম সর্দি কাশি থাকলেও তাদের সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে একমাত্র করোনাভাইরাস মুক্ত রয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। শনিবার (২ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলাটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, রাঙ্গামাটিতে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ২৪৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪০ জনের রিপোর্ট হাতে এসেছে। তাদের কারো শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মেলেনি। বাকি ১০৪টি রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে।
এদিকে, রাঙামাটি জেলার মোট ১ হাজার ৮০১ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ১ হাজার ২৯১ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৫১০ জন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে ৮৭১ জনের।
এর আগে রাঙামাটির রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি এবং রাঙামাটি সদর উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তিনজন মারা যান। এদের মধ্যে দুইজন আইসোলেশনে ছিলেন। তিনজনকেই করোনাভাইরাস রোগীদের মতো দাফন ও দাহ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার রিপোর্টে তিনজনের কারো শরীরেই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
অবশ্য রাঙামাটির লংগদুর এক বাসিন্দা হবিগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া রাঙামাটির বেতবুনিয়ার এক মারমা যুবক নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং ভৈরবের এসিল্যান্ড হিসেবে কর্মরত রাঙামাটির বাসিন্দা সরকারি এক কর্মকর্তাও করোনাভাইরাস পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
যেভাবে করোনাভাইরাস মুক্ত রাঙামাটি
রাঙামাটি কীভাবে এখনো করোনামুক্ত থাকলো সে প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন,পুলিশ ও সেনাবাহিনী সকলের সাথে সমন্বয় করে আমরা রাঙামাটিকে করোনামুক্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। রাঙামাটিতে আমাদের যে ১২টি চেকপোস্ট রয়েছে সেগুলোতে কড়া নজরদারি রেখেছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে। শহরের বাজার, রাস্তাঘাট ও জনবহুল এলাকায় জনসমাগম যাতে না ঘটে এবং সকলে যাতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে লক্ষ্যে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি নিয়মিত।”
এনডিসি আরও বলেন, “আমরা রাঙামাটি শহরে প্রতিদিন পাঁচটি মোবাইল টিম পরিচালনা করছি এবং এ পর্যন্ত জনগনকেও সচেতন করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। যারা রাঙামাটির বাইরে থেকে আসছে তাদের বিষয়ে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।”
রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, “আমরা শুরু থেকেই রাঙামাটির জনগণকে সচেতন করার জন্য শহর থেকে শুরু করে দুর্গম অঞ্চলগুলোর জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে করোনা সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ, মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্পর্কে অবহিত করে আসছি। এর পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”
ডা. মোস্তফা কামাল আরও বলেন, “আমরা ন্যূনতম সর্দি কাশি থাকলেও তাদের সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। রাঙামাটির প্রশাসন সারাদেশের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম ছিলেন। শুরু থেকেই রাঙামাটির সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে বাইরে থাকা মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে বাধ্য করেছেন। কাউকেই ছাড় দেয়নি। জেলার মানুষও অনেক বেশি সচেতনতা অবলম্বন করেছেন।”
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিল্পী রানি রায় বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই প্রশাসনের সকলে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের চেষ্টা ও রাঙামাটির জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতায় এখনো আমরা করোনামুক্ত আছি।”
তিনি আরও বলেন, “অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাঙামাটির বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে এবং রাঙামাটি থেকে বের হতে দিইনি। বাইরে থেকে কেউ রাঙামাটিতে আসলেও তার হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা শহরের বনরুপা, কলেজ গেট এলাকার বাজার সামাজিক দূরেত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্থানান্তর করে মাঠে নিয়ে গেছি। এমনকি চাল বিতরণ কার্যক্রমেও সামজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাঙামাটি শহরসহ দশ উপজেলার ইউএনওর মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।”
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “শেষ পর্যন্ত আমাদের নিরাপদ থাকতে হলে সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। রাঙামাটি জেলায় প্রবেশের যে পথগুলো আছে, সবগুলো পথ আমরা আরও কঠোর করেছি। সবাইকে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।”
মতামত দিন