‘আমরা ইতোমধ্যে সুন্দরবনের জেলেদের নিরাপদ অঞ্চলে চলে যেতে সতর্ক করে দিয়েছি। যদিও এতে করে দুর্ঘটনা কমে যাবে, তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে’
সুন্দরবন যে বাংলাদেশের মানুষ ও সম্পদ রক্ষার ঢাল হিসেবে ভূমিকা পালন করছে সেটি আগেও বেশ কয়েকটি ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোনে প্রমাণিত হয়েছে।
তবে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন দ্রুত গতিবেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা সুপার সাইক্লোন “আম্ফান” থেকে কী এবারও বাংলাদেশকে রক্ষা করবে?
আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়টি যদি তার গতিপথ পরিবর্তন না করে তবে এটি খুলনা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানবে এবং এর প্রভাব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “তবে, ঘূর্ণিঝড়টি যদি ধীরে ধীরে সংকীর্ণও হয়ে আসে তবে এটি বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় এলাকা, সুন্দরবন জোনের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানবে।”
যৌথ টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রও সতর্ক করেছে যে, সুপার সাইক্লোনটি সুন্দরবনের দিকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, “এই ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের বাতাসের গতি বিবেচনা করে এটা মনে হচ্ছে যে, এটি সিডর ও আইলার তুলনায় আরও শক্তিশালী হবে।”
আরও পড়ুন - ১৯৯৯ সালের পর এই অঞ্চলের প্রথম সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় “সিডর” ২৬০ কিমি/ঘন্টা বেগে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল, যার ফলে ৩৫০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং দুর্যোগ উপদ্রুত এলাকার প্রচুর ক্ষতিসাধন হয়। তবে সুন্দরবন না থাকলে এই ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতো।
একইভাবে, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় “আইলা” সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল”কে ঠেকিয়ে দেয় সুন্দরবন।
আবহওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, “এটা যদি এর গতি অব্যাহত রাখে এবং দেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে তবে তা সিডরের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।”
তবে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঝড়টি উপকূলের দিকে আসতে আসতে বাতাসের গতি ধীরে ধীরে কমবে।
এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, অতীতে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সুন্দরবনই রক্ষা করেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “সুপার সাইক্লোনটি যদি সুন্দরবনে আঘাত হানে তবে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকবে।”
আরও পড়ুন - বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?
“যদি ঝড়টি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং তারপর খুলনায় আঘাত হানে, এ ক্ষেত্রে বনটি বাতাসের গতি কমিয়ে দেবে এবং সেটি দুর্বল হয়ে পড়বে। সে কারণেই বাংলাদেশ খুব বেশি হতাহতের মুখোমুখি হবে না,” বলছিলেন আমির হোসেন।
তিনি বলেন, “যতদূর আমাদের অবহিত করা হয়েছে, স্থলভাগে আসতে আসতে এটি দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে, বাতাসের গতি যদি ১০০ কিলোমিটারের উপরে থাকে, তবে সুন্দরবন থাকলেও এটি ধ্বংসাত্মক হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সুন্দরবনের জেলেদের নিরাপদ অঞ্চলে চলে যেতে সতর্ক করে দিয়েছি। যদিও এতে করে দুর্ঘটনা কমে যাবে, তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে। ”
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতি ১৫০-১৬০ কিলোমিটারের মধ্যে হতে পারে।
আরও পড়ুন - বাঘ বেড়েছে সুন্দরবনে
মতামত দিন