‘আমার মতো ধষর্ণের শিকার যেন কেউ না হয়। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আর আমাকে কেন ওসি স্যার এমন বাজে কথা বললো, আমার অভিযোগ কেন নিল না তার বিচার চাই’
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযোগ করে সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর স্বজনেরা।
ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর ভাই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, “চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি উপজেলার শান্তনগর সোহরাব মাস্টারের বাড়িতে আমার বোনকে একই উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের প্রভাবশালী মুকুল খানের ছেলে প্রিন্স খান বাবু ধর্ষণ করে। এ সময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ধর্ষক প্রিন্স বাবু ও আমার বোনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ঘটনার পর দিন ৩০ জানুয়ারি আমি ধর্ষণের অভিযোগ তুলে থানায় মামলা করতে চাইলে ঘটনাটি ওসি সাহেব প্রথমে পজিটিভভাবে গ্রহণ করেন। কিন্তু পরে আমাকে থানার একটি কক্ষে অজ্ঞাত কারণে ১৪ ঘণ্টা আটকে রাখেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে মামলা করলে আমাকে ও আমার বোনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দিবেন।”
তিনি বলেন, “ওসি সাহেক আমাকে শাসিয়ে আরও বলেন, আমার বোন নাকি খারাপ প্রকৃতির মেয়ে। সে নাকি পতিতার ব্যবসা করে। পরে আমার ও আমার কিশোরী বোনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।”
স্কুলছাত্রীর ভাই জানান, “ধষর্ণের বিষয়টি নেত্রকোনা পুলিশ সুপারকে অবহিত করলে পুলিশ সুপার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি সাহেবকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে এসপি স্যারের কথায় ওসি সাহেব আমাকে ও আমার বোনকে ফোন করে মামলা নেওয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে যান। এ সময় আমার বোনকে থানার একটি আলাদা কক্ষে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখেন এবং আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর কত বড় সাহস, আমার বিরুদ্ধে এসপির কাছে অভিযোগ করিস’। পরে আমাকে ও আমার বোনকে ৪৮ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার পর পৃথক দুটি সাদা কাগজে আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর রাখেন এবং বলেন ‘তোরা এখন যা, মামলা নেওয়া হবে’।”
তিনি বলেন, “কিন্তু ঘটনার ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযোগটি মামলা আকারে অর্ন্তভুক্ত করেননি। দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা আদালতের মামলা দায়ের করতে পারিনি। ধর্ষক এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলে হওয়ায় তার ভয়ে আমরা ছয়মাস যাবৎ আতংকে দিনাতিপাত করছি, পলাতক রয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, “আমার বোন আমাকে জানিয়েছে ওসি রাশেদুজ্জামান তাকে খারাপ ভাষায় গালি দেওয়ায় আমার বোন ওসি সাহেবকে বলেছেস, ‘স্যার আমি আপনার মেয়ের মতো’, তারপরও তিনি আমার বোনকে বেশ্যা বলে আখ্যায়িত করেন।”
ধর্ষক প্রিন্স প্রভাবশালী হওয়ায় ওসি বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন অভিযোগ তুলে তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ওসির এমন আচরণের বিচার প্রাথর্না করে পুলিশ মাহা-পরির্দশক (আইজিপি) বরাবরে গত ১০ জুন একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ধর্ষেণের শিকার ঐ কিশোরী জানান, “আমার মতো ধষর্ণের শিকার যেন কেউ না হয়। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আর আমাকে কেন ওসি স্যার এমন বাজে কথা বললো, আমার অভিযোগ কেন নিল না তার বিচার চাই।”
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার র্ভারপাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামানকে একাধিকবার তার সরকারি মোবাইলে ফোন করা হলেও কলটি রিসিভ হয়নি।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি বলেন, “সংবাদ সম্মেলনের খবরটি শুনেছি, যেহেতু বিষয়টি অনেকদিন পূর্বের তাই খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর পরর্বর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
মতামত দিন