উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাণীটি হারিয়ে গেছে বলে খবর শোনা যায়। তবে সেটি গাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে তা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা থেকে একটি মেছো বিড়াল আটক করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের মাজপাড়া মন্ডলপাড়া গ্রামের একটি বাঁশঝাড় থেকে পোষা কুকুরের সহায়তায় মেছো বিড়ালটি আটক করা হয়
তবে ওই বিড়ালটি নিজ দায়িত্বে বন বিভাগের কাছে পৌঁছানোর কথা বলে সেটিকে জিম্মায় নেন আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম। কিন্তু তারপরই বিড়ালটির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী শাহীন মন্ডল বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে আফজাল হাজীর চিৎকার শুনে বাড়ির পাশেই আম বাগানে যাই। গিয়ে দেখি আকৃতি মোটাতাজা প্রায় সাড়ে চারফুট লম্বা বাঘের মতো একটি প্রাণী। এ সময় বাড়ির একাধিক পোষা কুকুর সেটিকে ধাওয়া দেয়। এর সাথে গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষও যোগ দেয়। এ সময় প্রাণীটি বাঁশ ঝাড়ে ঢুকে একটি বাসের উপর উঠে। পরে স্থানীয়রা কৌশলে বাঁশের সাথে দঁড়ি পেঁচিয়ে সেটিকে আটক করে ও মসজিদের একটি পুরাতন খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়।
শাহীন মন্ডল বলেন, বাঘ আটকের খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন আসতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম পৌরসভার একটি ট্রাকসহ সরকারি জীপে ঘটনাস্থলে আসেন। আমরা প্রাণীটিকে বন বিভাগের কাছে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেও উপজেলা চেয়ারম্যান নিজ দায়িত্বে সেটি বন বিভাগে জমা দেওয়ার কথা বলে নিজেই গাড়িতে করে নিয়ে যান। শাহীন বলেন, এর পর কি হয়েছে সেটা আমরা জানি না।
আরও পড়ুন - ভারতীয় পাহাড় থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল মেছো বিড়ালটি
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রাণীটি হারিয়ে গেছে বলে খবর শোনা যায়। তবে সেটি গাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে এ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তানভীর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এ বিষয়ে সামাজিক বনায়নের পাবনাস্থ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, “প্রাণীটিকে আটকের পর উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম নিজ দায়িত্বে আনছিলেন। কিছুপথ আসার পর সেটি নাকি পালিয়ে গেছে।”
প্রাণীটি পালিয়ে গেছে নাকি ভেতরে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে, এমন প্রশ্নে বন কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান বলেন, “যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত করে মূল ঘটনা অনুসন্ধান করা হবে।”
আরও পড়ুন - মুন্সীগঞ্জে ‘বাঘের’ ঘোরাফেরা, আসল রহস্য কী?
এদিকে, পরিচয় নিশ্চিত হতে ঢাকা ট্রিবিউনের হাতে আসা প্রাণীটির ছবি পাঠানো হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলাকে। তিনি প্রাণীটি মেছো বিড়াল বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “মেছো বিড়ালকে (Fishing Cat) অনেক এলাকায় মেছোবাঘ নামেও ডাকে। এর প্রকৃত নাম মেছো বিড়াল। বাঘ নামে ডাকার কারণে শুধু শুধু আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রাণীটি মানুষকে আক্রমণ করে না, বরং মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। তাই এটি নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই প্রাণীটি বিচরণ রয়েছে। জলাভূমি আছে এমন এলাকায় বেশি দেখা যায়। প্রাণীটি জলাভূমির মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ছাড়াও পোকামাকড় ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। জনবসতি স্থাপন, বন ও জলাভূমি ধ্বংস, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০০৮ সালে মেছো বিড়ালকে বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছে আইইউসিএন। তাছাড়া বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রজাতি সংরক্ষিত। তাই এই প্রাণীটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
আরও পড়ুন - পাহাড়ি ঢলে বিপদগ্রস্ত ৯টি বন্যপ্রাণীকে পিটিয়ে হত্যা
আরও পড়ুন - পদ্মার চরাঞ্চলে ভয়ংকর রাসেল ভাইপারের উপদ্রব, পরিদর্শনে জেলা প্রশাসন
মতামত দিন