কোথাও কোথাও তারের জটলার ভার সইতে না পেরে বাঁশগুলো হেলে পড়েছে। কোথাওবা হেলে পড়া বাঁশকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে আরেকটি বাঁশ দিয়ে
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দুটি ওয়ার্ডের শত শত বাড়ি , স্থাপনা, কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক খুঁটির পরিবর্তে বাঁশের খুঁটির সাহায্যে সংযোগ দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। এজন্য হাজার হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এতে হাজার হাজার মানুষ রয়েছে জীবনের ঝুঁকিতে। তবে এলাকাবাসীর শত আবেদন-নিবেদনের পরেও ভ্রুক্ষেপ করেনি নেসকো।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর ৪ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল খটখটিয়ার টাইগার পাড়া লালপুল ব্রিজ মোড় এলাকার অনেক বাড়িতেই বাঁশ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ দিয়েছে নেসকো। কোথাও কোথাও তারের জটলার ভার সইতে না পেরে বাঁশগুলো হেলে পড়েছে। কোথাওবা হেলে পড়া বাঁশকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে আরেকটি বাঁশ দিয়ে। রাস্তার পাশে খাল ও পুকুরের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। কোথাও আবার বিদ্যুতের তারে জড়িয়েছে লতাপাতা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমতাবস্থায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এক কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তার দুই পাশে বাঁশের খুঁটির সাহায্যে প্রায় ৩শ' বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মূল লাইনটি যেখানে গিয়ে শেষ, সেখানে ঝোলানো হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের ১০টি মিটার। বাকি মিটারগুলো বসানো হয়েছে গ্রাহকদের বাড়িতে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে।
ছবি: ঢাকা ট্রিবিউনটাইগারপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রামের কিছু বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে, কিছু বাড়িতে নেই। এলাকার সবাই বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করেছে। কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করতে বলেছে। জানিয়েছে, দ্রুতই খুঁটি স্থাপন করা হবে।
খটখটিয়া এলাকার আশরাফুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, আনিছুর রহমান, ফরহাদ হোসেন, আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, তারা জানেন এভাবে বিদ্যুৎ নেওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ, তবু কিছু করার নেই। ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই এলাকায় ৩-৪ মাস পর পর একত্রে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়। এসব এলাকায় নেসকোর লোকজন বিদ্যুতের মিটার দেখে বিল দেয় না, তারা অফিসে বসে থেকে মনগড়া বিল তৈরি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেসকোর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১০০ গজের বেশি দূরত্বে সার্ভিস লাইন দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ১০০ গজের অতিরিক্ত দূরত্ব হলে অবশ্যই খুঁটি দিতে হবে, অন্যথায় সংযোগ দেওয়া যাবে না। অথচ এ এলাকায় এক কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে গিয়ে খুঁটি বসানো হয়েছে। মাঝের জায়গাগুলোতে বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “সংযোগগুলো নানা সময় দেওয়া হয়েছে। এলাকার মানুষের তদবিরে সংযোগগুলো দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।”
ঝুঁকি এড়াতে তারা শিগগিরই ওই এলাকায় খুঁটি বসানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মতামত দিন