আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেস ডায়রি আদালতে দাখিল করেন
কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ঢাকা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানের করা ক্রিমিনাল মামলার অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আদালত।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিডি নিয়ে আদালতে হাজির হলে কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোশাররফ হোসেন কেস ডায়রি পর্যালোচনা করে তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা (জিআরও) আমজাদ হোসেন ও আদালতে নিযুক্ত সাংবাদিক আরিফের পক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলুর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট মামলার কেস ডায়রি তলব করেন আদালত। পরে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সেটি আদালতের নজরে আনেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও)।
শুনানি শেষে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের আইজীবী মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ প্রবিধানমালা ১৯৪৩ এর ২১ প্রবিধান এর অধীনে মামলার অগ্রগতি জানতে কেস ডায়রি তলবের আবেদনটি দাখিল করা হয়। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মঙ্গলবার কেস ডায়রি আদালতে দাখিল করেন। আদালত কেস ডায়রি পর্যালোচনা করে তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন - ডিসি সুলতানা: এনকাউন্টারের ইচ্ছা ছিল না, মিডিয়া 'এভোয়েড' করো
জিআরও আমজাদ হোসেন জানান, কেস ডায়রি পর্যালোচনা করে তদন্তের সার্বিক অগ্রগতিতে আদালত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আগামী ২৯ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন। তবে ওই দিনই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এমনটা নয়।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে নিজ নামে পুকুর খননের অভিযোগ ওঠায় সেবিষয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন আরিফুল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নিয়োগ অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন করছিলেন সাংবাদিক আরিফুল।
পরে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে আরিফুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময় তাকে ক্রসফায়ারেও হত্যা করার কথা বলা হয়। পরে তার বাড়িতে আধা বোতল মদ ও গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ আনা হয় এবং মধ্যরাতেই জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়।
মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
অন্যদিকে, পরে জামিন পেয়ে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে চাওয়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত ৩৫/ ৪০ জনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন সাংবাদিক আরিফ। গত ৩১ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে সেই মামলা রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যার তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন - আরডিসি নাজিম: কোন প্রধানমন্ত্রী তোমাকে বাঁচায় দেখা যাবে
মতামত দিন