কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘ফকিরাপুল’ নামটি শুনতে খারাপ লাগে বলে এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার প্রধান সড়ক টি.এ.রোডের মধ্যবর্তী টাউন খালের ওপর প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো কালভার্টের নাম ‘‘ফকিরাপুল’’। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘‘ঘোড়াপট্টির পুল’’ নামেও পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি এটির নাম পরিবর্তন করে “থানা ব্রীজ” রাখে পৌরসভা।
বিষয়টি মেনে নিতে নারাজ ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। বিষয়টি নিয়েছে শুরু হয়েছে সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কালভার্টটির দুই প্রান্তে “থানা ব্রীজ” লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়।
পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘ফকিরাপুল’’ নামটি শুনতে খারাপ লাগে বলে এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গত দু’দিন ধরে ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়।
অনেকে এটাকে আগের প্রচলিত নাম “ফকিরাপুল” কিংবা ‘‘ঘোড়াপট্টির পুল’’ নাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন। অনেকে আবার জেলার বিখ্যাত কোনো ব্যক্তিত্বের নামে নামকরণেরও দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শহরের প্রবীণ সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, ‘‘সেতুটি যেখানে আছে আগে এর কাছেই যাতায়তের জন্য ঘোড়ার গাড়ি এসে দাঁড়াতো। ঘোড়ার গাড়ি দাঁড়াতো বলে এলাকাটির নাম ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে সেখানে সেতু বানানো সেটিকে সবাই ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই চিনতো। পরবর্তীতে এই সেতুতে ভিক্ষুকেরা বসতো বলে ফকিরাপুল নাম হয়ে যায়। আমি মনে করি, নাম পরিবর্তনের জন্য সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতো।”
সেতুটির নাম “ঘোড়াপট্টির পুল” রাখা হলে তা শহরের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো বলে অভিমত দেন জয়দুল।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি জহিরুল ইসলাম স্বপন এ বিষয়ে বলেন, অনেক আগে থেকেই এটি “ফকিরাপুল” হিসেবে লোকমুখে পরিচিত। তবে ফকিরদেরকে কেন্দ্র করে নামটি হওয়ায় পরিবর্তনের বিষয়টি মানতে পারছি না। কারণ তারাও (ভিক্ষুক) তো মানুষ।
জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পিযূষ কান্তি আচার্য্য ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ঘোড়াপট্টি ব্রীজেরই নামকরণের দাবি জানাচ্ছি, থানা ব্রীজ নয়। কারণ ঘোড়াপট্টির সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস জড়িত।’’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সচিব মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘ফকিরাপুল নামটা শুনতে খারাপ দেখায় বলে বুধবার পৌর পরিষদের সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন।”
এদিকে, কালভার্টটিতে বসে যাতে কেউ ভিক্ষাবৃত্তি না করতে পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে বসে ভিক্ষা করতেন এমন ২৪ জনকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা ও পৌরসভার পক্ষ থেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
মতামত দিন