কেবল নামের মিল থাকায় ‘চেক ডিজঅনার’ মামলায় ৮০ বছরের বৃদ্ধকে কারাগারে পাঠালো পুলিশ
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা শহরের কলেজ রোডস্থ বনানী এলাকায় শুধু নামের মিল থাকায় হাবিবুর রহমান নামে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।
রবিবার (৪ অক্টোবর) গ্রেফতার করে ওই দিনই পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয় ওই বৃদ্ধকে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা পৌর শহরের মুজিব নগর রোডের নূর মোহাম্মাদ মাস্টারের ছেলে ও গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক হাবিবুর রহমান তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেসময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন।
কিন্তু এ ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ডিজঅনার হয়।
পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে হাবিবুর রহমানের বিরূদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালে তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ নেননি দাবী করে ওই বছরের ১৬ জুন লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এরপর ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় ২০১৮ সালের ২৫ মার্চে দেওয়া রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ, অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু।
রায়ের দিন প্রকৃত ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
জানা গেছে, ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান প্রায় পাঁচ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে এখন মুদি-মনোহরির ব্যবসা করছেন।
ওই পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকা থেকে ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, “আসামির নাম ও পিতার নামে মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি আমরা সংশোধন করে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রুত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বলেন, “আদালত থেকে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে আদলত তাকে কারাগারে পাঠান। পরে জানতে পারি তিনি প্রকৃত আসামি নন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।”
কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার স্বামী কোনোদিন ব্যবসা করেননি। আর আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। আমাদের দুই ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং আমাদের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী এখানে বসবাস করি। পুলিশকে বিষয়টি বলেছি। কিন্তু, তারা শোনেনি।”
বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে আবু সালেহ বলেন, “আমার বাবাকে কারাগারে পাঠানোর সংবাদ পেয়ে আমি ঢাকা থেকে চলে আসি এবং কাগজপত্র উঠানোর পর দেখি আমার নিরপরাধী বাবাকে পুলিশ শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে সাজাপ্রাপ্ত অন্য লোকের পরিবর্তে কারাগারে পাঠিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমার বাবা অসুস্থ, চোখে ভাল দেখতে পান না, কানেও ভালো শুনতে পান না এবং চলাচলের তেমন শক্তিও নেই। এমনকি তিনি বাসার পাশে মসজিদে গিয়েও নামাজ আদায় করতে পারেন না। আমার বাবাকে এবং আমাদের পরিবারকে এভাবে অহেতুক হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয় করার ঘটনার সুবিচার চাই।”
মতামত দিন