বর্ষা শেষে ধানী জমিতে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ায় মাছ শিকারে ছুটে আসছে বক, ডাহুক, হারগিলা, শামুকখোল প্রভৃতি পাখি। শিকারিরা এসব পাখি ধরতেই ফাঁদ পাতছে। অনেকেই আবার আদাজল খেয়ে ইয়ারগান ও বাটুল হাতে পাখি শিকারে নেমেছে
নীলফামারী জেলা সদরসহ সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, ডোমার, ডিমলা ও পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরের পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, খানসামা, তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাখি শিকারের মহোৎসব।
পেশাধারী পাখি শিকারি ও শখের বসে অনেকেই বিস্তীর্ণ এলাকার ধানী জমি, গাছ-গাছালী ও বসতভিটার বাঁশঝাড়ে অবাধে পাখি শিকার করছে। প্রায় প্রতিদিনই পাখি শিকারের দৃশ্য চোখে পড়লেও প্রশাসন বা স্থানীয়ভাবে পাখি নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এসব প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বর্ষা শেষে ধানী জমিতে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ায় মাছ শিকারে ছুটে আসছে বক, ডাহুক, হারগিলা, শামুকখোল প্রভৃতি পাখি। শিকারিরা এসব পাখি ধরতেই ফাঁদ পাতছে। অনেকেই আবার আদাজল খেয়ে ইয়ারগান ও বাটুল হাতে পাখি শিকারে নেমেছে।
এছাড়াও এসব পাখি যে স্থানে বাসা বেধেঁছে সেসব বাঁশঝাড় বা বন বাদারে, গিয়েও অনেকে পাখি শিকারে মত্ত হয়েছে। ফলে পাখি শিকার করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করার দৃশ্যও চোখে পড়ার মত।
আরও পড়ুন - নীলফামারীতে প্রকাশ্যে চলছে পাখি শিকার
এদিকে শীতের আগমনী বার্তা হিসেবে সকালে কুয়াশা দেখা দেওয়ায় কিছু কিছু অতিথি পাখিরও আগমন ঘটছে এসব এলাকায়। এখনই পাখি শিকার বন্ধ করা না গেলে অতিথি পাখির আগমন ব্যাহত হবে। এ ছাড়াও দেশীয় পাখির বিকাশও বাধাগ্রস্থ হবে। ভারসাম্য হারাবে জীববৈচিত্র্য। জেলায় পাখি নিয়ে কাজ করে স্থানীয় সংগঠন “সেতুবন্ধন” ও অন্যান্য সংস্থা পাখি শিকার বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় সচেতন মানুষের মাঝে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
সেতুবন্ধনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে পাখি নিধন বন্ধে জাতীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। তাছাড়া, মানুষের সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ, সভা সেমিনার করে যাচ্ছি। তবুও কিছু কিছু মানুষ নিজের ইচ্ছামত পাখি শিকার করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সাহিদুল ইসলাম বলেন, পাখি নিধকারীরা পাখি শিকার করে জীব বৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। তারপরও আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও সচেতনতার অভাবে খাল বিলে ছুটে আসা নানা প্রজাতির পাখি ধরা পড়ছে শিকারিদের ফাঁদে।
আরও পড়ুন - আটক মেছো বিড়াল নিয়ে গেলেন উপজেলা চেয়ারম্যান!
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মির্জা মুরাদ হাসান বেগ বলেন, “কেউ পাখি শিকার করলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির বিধান রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের খবর পেলে আমরা সেখানে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারি।”
অবাধে পাখি শিকারের ঘটনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক। ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, “বন্যপ্রাণী আইন-১৯৭৪ ও বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-১ অনুযায়ী এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা, শিকার বা এর কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
আরও পড়ুন - মুন্সীগঞ্জে ‘বাঘের’ ঘোরাফেরা, আসল রহস্য কী?
আরও পড়ুন - পাহাড়ি ঢলে বিপদগ্রস্ত ৯টি বন্যপ্রাণীকে পিটিয়ে হত্যা
মতামত দিন