সংঘর্ষ চলাকালে শ্রমিকদের ওপর ২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৭ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ
বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল চালুর দাবিতে খুলনার আটরা শিল্পাঞ্চলের ইস্টার্ন গেইটে মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছেন পুলিশ। এ ঘটনায় ৯ শ্রমিক আহত হয়েছে।
সোমাবার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ইস্টার্ন গেটে খুলনা যশোর মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে শ্রমিকরা। ১১ মিনিট পর পুলিশ এসে তাদের তুলে দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। মুহুর্তেই এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
আহত শ্রমিকরা হলেন- নাজমা খাতুন, খাদিজা বেগম, হাফিজা বেগম, সুমি রায়, শেফালী বালা, সুচিত্রা বিশ্বাস, সাফিয়া। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে চার শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে, সংঘর্ষের সময় শ্রমিকদের ইটপাটকেলে তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়। পুলিশ জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে ২ রাউণ্ড শর্টগান ও ৭ রাউণ্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) এডিসি (উত্তর) সোনালী সেন বলেন, শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত মিডিয়া সেল থেকে জানানো হবে।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, শ্রমিকরা সকালে শান্তিপূর্ণ অবরোধ শুরু করে। পুলিশ সকলকে তুলে দেওয়ার পর উত্তজনা সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপে ২ জন শ্রমিক আহত হয়। এদের মধ্যে জেজপিইএর আহমেদ তাসনিম শ্যামলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও একজন নারী শ্রমিক আহত হয়েছে।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের নেতারা বলেন, বিজিএমসির দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে পাটকলে লোকসান হয়েছে। লুটপাটের জন্যই পাটকল ও পাটশিল্প আজ ধ্বংসের পথে। অথচ বিজিএমসির দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে সৃষ্ট লোকসানের দায় সাধারণ পাটকল শ্রমিকদের ওপর চাপাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের অন্যায় শাস্তির ফল ভোগ করছেন শ্রমিকেরা। অবিলম্বে পাটকল চালুর দাবি জানান তারা।
শ্রমিক নেতারা আরও জানান, করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক শ্রমিকের জীবন চলছে পেশার বদল ঘটিয়ে মানবেতরভাবে। কর্মহারা এই শ্রমিকদের কেউ কেউ সহজ পেশা হিসেবে রিকশা চালাচ্ছেন। কেউবা ফল বিক্রেতা কিংবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজেও নেমেছেন। আর এখনও কাজ জোগাড় করতে না পেরে বেকার জীবন পার করছেন অনেকে।
ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য মুনীর চৌধুরী সোহেল বিনা উস্কানিতে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এর ফলে ২ জন শ্রমিক গুরুতর জখম হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিএমসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও ভ্রান্ত নীতির কারণে পাটশিল্পে লোকসান হচ্ছে। লোকসানের এই দায় নিষ্ঠুরভাবে শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের অন্যায় দুর্নীতির ফল আজ শ্রমিকদের ভোগ করতে হচ্ছে। নিষ্ঠুর এ খেলা বন্ধ করতে হবে। লুটপাটের এ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। সরকার পাটকল বন্ধের জন্য এই করোনার সময়কে বেছে নিয়েছে। যাতে শ্রমিকরা আন্দোলন করতে না পারে।
তিনি দ্রুত বন্ধ পাটকলগুলো চালুর দাবি জানান।
মতামত দিন