১৫০টি পরিবারের কাছ থেকে এই অর্থ নেয় স্থানীয় এক প্রভাবশালী
গোপালগঞ্জ সদরে গভীর নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৫০টি পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। বছর পেরিয়ে গেলেও নলকূপ পায়নি পরিবারগুলো। ভুক্তভোগীরা টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাদেরকে হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন ওই প্রভাবশালী। বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউনিয়নের কাজুলিয়া গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে জসিম সরদারেরর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে নলকূপ বসিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকার ১৫০টি পরিবারের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা নেন জসিম সরদার। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেও নলকূপের দেখা মেলেনি। খোঁজ নিতে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিচ্ছেন জসিম। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চুর সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে তিনি কাউকে পরোয়া করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের একজন সেলিনা বেগম বলেন, “উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আরও অনেক নেতার সঙ্গে ভালো সম্পর্কের জোর দেখায় জসিম। সে বলে, বাচ্চু ভাইকে ধরে এলাকায় ১০ জনকে গভীর নলকূপ দিয়েছি। আমার কাছে নলকূপ, ঘাটলা, চাউলের কার্ড কইর্যা দেওয়া কোনো ব্যপার না। এসব শুনে আমি তার কাছে ৩টি কলের জন্য মোট ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তখন বলেছিল ১৫ দিনের মধ্যে দেবে। কয়দিন আগে আমি তার বাড়ি টাকা চাইতে গেলে আমাকে গালাগালি করেছে। আমাদের টাকাও ফেরত দেয় না, আবার ডিপকলও দেয় না।”
আরেক ভুক্তভোগী কাজুলিয়া গ্রামের এসএম মুনজুর আলম বলেন, “নলকূপ বসাতে খরচের কথা বলে ১৫০ জনের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জসিম। চেয়ারম্যানের কথা বলায় আমরা বিশ্বাস করে এতগুলো টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছি। এখন নলকূপতো দূরের কথা, টাকাও ফেরত পাচ্ছি না।”
কাজুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাখন লাল এ বিষয়ে বলেন, “অনেকে আমার কাছে এসেছেন। জসিম এর আগে ১০ টি গভীর নলকূপ এলাকায় দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কয়েকদিন আগে জসিমের বাবা আবুল হোসেনকে বলেছিলাম ভুক্তভোগীদের টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিতে। আমার কথা না রাখলে, আমার কী করার আছে?”
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জসিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
তার বাবা আবুল হোসেন বলেন, “উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু আমার বাড়িতে অনেকবার এসেছেন। তার নাম করে আমার ছেলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। গত সপ্তাহে উপজেলা চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে আমাকে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে গেলে তিনি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে সেগুলো ফেরত দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন।”
উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু বলেন, “জসিমের টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। জানার পর জসিমের বাবাকে ডেকে টাকা ফেরত দিয়ে দিতে বলেছি। তারা ইতোমধ্যে কিছু লোকের টাকা ফেরত দিয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। বাকি টাকাও তারা ফেরত দেবে।”
ইউএনও সাদিকুর রহমান খান বলেন, “এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”
মতামত দিন