এ সময় পাংখো (এক ধরনের পুতুল) নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত পাহাড়ি মানুষ রাস্তায় নেমে আসে
“যা কিছু সুন্দর; যা কিছু সত্য, তারই বন্দনা আজ অতি জরুরি। নব জীবনের নব যাত্রার সন্ধিক্ষণে আপনাকে স্বাগত জানাই। মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে আসুন ওয়াগ্যোই মিলনমেলায় সমবেত হই; সবার শান্তি কামনায় প্রাণের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিই নব দিগন্তে।”
এভাবেই “মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” (প্রবারণা পূর্ণিমা)-তে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে উৎসব উদযাপন কমিটি।
আতশবাজি, রং-বেরংয়ের বর্ণিল ফানুসের ঝলকানি আর ময়ূরপঙ্খীর আদলে তৈরি রথ টানা উৎসবের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের বৌদ্ধ অনুসারীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মাহা ‘‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’’ (প্রবারণা পূর্ণিমা) উদযাপনে মেতে উঠবে। একাধিক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় এ উৎসবের মূল আয়োজন চলবে ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত। পাহাড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমারা ‘‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’’ নামে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকে।
আয়োজক সূত্র জানায়, এবারের উৎসবে পাহাড়ের আকাশ ছেয়ে যাবে বিভিন্ন ধরনের বর্ণিল ফানুসে। বৌদ্ধ মন্দিরে মন্দিরে (ক্যায়াং) জ্বালানো হবে হাজারো বাতি, রাতের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি, মন্দিরে ছোয়াইং ও অর্থ দানের পাশাপাশি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় বান্দরবানের পুরাতন রাজার মাঠে সন্ধ্যায় বন্ধনার মধ্যে দিয়ে খ্যংওয়া ও খ্যংফিয়া ক্যং এর রথ যাত্রার শুভ উদ্বোধন, একই দিন বিভিন্ন ক্যং থেকে ফানুস বাতি উত্তোলন, রাতভর পাড়ায় পাড়ায় বর্ণিল পিঠা উৎসব এবং মন্দিরে মন্দিরে ছোয়াইং (ভাত-তরকারি) দান। ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ‘‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়েঃ লাগাইমে..’’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যাই..) আদিবাসী মারমা’রা এই বিশেষ গানটি পরিবেশন করে মাহারথ যাত্রা শুরু করবে।
এ সময় পাংখো (এক ধরনের পুতুল) নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত পাহাড়ি মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। রথে জ্বালানো হয় হাজার হাজার মোমবাতি এবং দান করা হয় নগদ অর্থ। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মধ্যরাতে শঙ্খ (সাঙ্গু) নদীতে রথ উৎসর্গ করা হবে। একই দিনে খ্যংওয়া ও খ্যংফিয়া ক্যং এ বিকেলে বিহারের উদ্দেশ্যে গমন, পঞ্চশীল গ্রহণ ও ধর্ম দেশনার মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের ইতি টানা হবে।
উৎসব কমিটির সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্ণিল এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, বোমাং রাজা উ চ প্রু, জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রতিবছর উৎসবের তিনদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নুতন নতুন পোশাকে শহরের খ্যংওয়া ক্যাং, খ্যংফিয়া ক্যাং, করুণাপুর বৌদ্ধ বিহার, বুদ্ধ ধাতু জাদি, রাম জাদি, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, আম্রকানন বিহারসহ অন্যান্য ধর্মীয় ক্যাং বা বিহারগুলোতে প্রার্থনা এবং ছোয়াইং দানের জন্য পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। মারমা তরুণ-তরুণীরা রাতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়ায় পাড়ায় একে অপরের আয়োজনে গিয়ে তৈরি করবে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি।
উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মার্মা বলেন, ‘‘এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অনুষ্ঠান পালন করা হবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে, অনুষ্ঠানও সীমিত করা হয়েছে।”
বৌদ্ধ অনুসারীরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষ করে এবং শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে (ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ) বৌদ্ধ বিহার থেকে নিজ সংসারে ফিরে যান। তাই তাদরে কাছে এই দিনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এই উৎসবকে সামনে রেখে বান্দরবানে পর্যটক আগমনের কারণ অনুষ্ঠানস্থলে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই, তারপরও উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মতামত দিন