এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের বা কেউ আটক হয়নি
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে গণপিটুনিতে নিহত আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী (৫০) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছে।
নিহত আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রি পাড়ার মৃত আবু ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান।
একই ঘটনায় আহত হন সুলতান জোবায়ের আব্বাস (৪৫) নামে আরও এক ব্যক্তি। আহত সুলতান জোবায়ের একই এলাকার শেখ আব্বাস আলীর ছেলে। তিনি পেশায় দলিল লেখক বলে জানা যায়।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের বা কেউ আটক হয়নি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী ও সুলতান জোবায়ের আব্বাস পাটগ্রামের বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজের পর মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীর (৬০) সঙ্গে সালাম ও করমর্দন করেন। এরপর সেখানে অস্ত্র আছে এমন দাবি করে মসজিদের কোরআন ও হাদিস রাখার সেলফ তল্লাশি করেন। এ সময় মসজিদ চত্বরে থাকা স্থানীয় আবুল হোসেনসহ (হোসেন ডেকোরেটর) ৫-৬ জন মুসল্লি তাদের দুজনকে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম মারপিটের শিকার দুইজনকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে তালা দিয়ে রাখে।
আরও পড়ুন - লালমনিরহাটে যুবককে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
এদিকে, এরইমধ্যে এলাকায় কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাজার হাজার উত্তেজিত মানুষ বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জমায়েত হয় এবং ইউপি ভবনের জানালা-দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদুন্নবীর মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ বের করে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে ইউপি ভবনে আটক থাকা অপর ব্যক্তি পুলিশের হস্তক্ষেপে কোনোমতে রক্ষা পান।
জানতে চাইলে ওই মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী বলেন, “আমাকে র্যাব ও আর্মির পরিচয় দিয়ে বলা হয় যে, কোরআন শরীফ ও হাদীস রাখার তাকে অস্ত্র আছে। এ কথা বলেই অস্ত্র আছে কিনা, একজন তা খুঁজতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সবকিছু তছনছ করে। এ সময় মসজিদের বাইরে অবস্থান করা হোসেন আলী (৩৫) নামে এক মুসল্লিসহ ৫-৬জন মুসল্লি মসজিদের ভেতরে ঢুকে তাকে আটক করে বাইরে নিয়ে যায়। মসজিদের বারান্দায় থাকা অপর জনকেসহ অপরিচিত দুই ব্যক্তিকে মসজিদের বারান্দার সিঁড়িতে মারধর করছিল তারা। পরে হাফিজুল ইসলাম মেম্বার এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। এরপর কী কী হয়েছে আমি জানি না।”
ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, “আমি তাদের নিয়ে এসে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে তালা দিয়ে রেখে প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের আসার জন্য সংবাদ দেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ছিল যে, তাদের পরিচয় নিতেও পারিনি। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে উপস্থিত হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। লোকটাকে বাঁচাতে পারলো না কেউ।”
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থল আমরা পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছি। আমাদের সিআইডিসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।”
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেছি পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য। ঘটনার অধিকতর তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
মতামত দিন