সুকুমার মণ্ডল ও গোলাম রসুল ওই নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের মাছের ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় গণধর্ষণের মামলা তুলে না নেওয়ায় ভুক্তভোগী নারীর ভাইকে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সোয়ালিয়া ব্রিজ নামক স্থান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়।
আহত যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার (১৮ নভেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত ওই যুবকের বোন (ভুক্তভোগী) জানান, সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা গণধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তার ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এর জেরে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার ভাই বাড়ি থেকে অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে শ্যামনগর উপশহরে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করা হয়। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সোয়ালিয়া ব্রিজের পাশ থেকে দুই হাত ও দুই পা বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি এ সময় অভিযোগ করে বলেন, তার দায়ের করা মামলায় নিশ্চিত শাস্তি জানতে পেরে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জুবায়ের জানান, ওই যুবকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারি জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া শরীরে বিষাক্ত কোনো তরল পুশ করা হয়েছে। তাকে জরুরিভিত্তিতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সুকুমার মণ্ডল ও দেবীপুর গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক গোলাম রসুল ওই নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের মাছের ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। ওই দিন তারা বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিদ্দিকের সঙ্গে ওই নারীর কাল্পনিক বিয়ে দেয়। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কিছুদিন পার করার একপর্যায়ে ওই বছরের ১১ জুন সকালে খুলনায় একটি বাড়িতে তাকে আটকে রেখে পাঁচদিন ধরে ছিদ্দিক, গোলাম রসুল ও সুকুমার--তিনজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ওই বছরের ২৬ জুলাই ভুক্তভোগী নারী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিচারক বদলী হওয়ায় দিন পরিবর্তন হয়।
মতামত দিন