সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর উভয় পরিবার তাদের বিয়ের উদ্যেগ নিলে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল টাকা দাবি করে
হাইকোর্টের নির্দেশের পর অবশেষে ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারাগারে বর ও কনেসহ দুই পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচিত এই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে সকালে মিষ্টি নিয়ে দুই পক্ষের আত্মীয়-স্বজনসহ আইনজীবীরা কারাগারের ফটকে হাজির হন। পরে বিয়ের মূল আয়োজন সম্পন্ন করতে আসেন ফেনী জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান এবং বিয়ের কাজী আবদুর রহিম।
দুপুরে জেলা কারাগারের জেলার শাহাদাৎ হোসেনের অফিসকক্ষে প্রবেশ করেন ধর্ষণের শিকার তরুণী। আগে থেকে ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন কারাবন্দি জহিরুল হক জিয়া। এ সময় ৬ লাখ টাকা দেনমোহর এবং ১ লাখ উশুল ধার্য করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পরে মিষ্টিমুখ করে দুই পরিবারের সদস্যরা কোলাকুলি করেন। ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে পড়ান মাওলানা আক্তার হোসেন। বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন নিকাহ রেজিস্টার আব্দুর রহিম।
জেলা কারাগারের সুপার আনোয়ারুল করিম ঢাকা টিবিউনকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পরিবারের উপস্থিতিতে তাদের সম্মতিক্রমে কারাবন্দি জহিরুল হক জিয়ার সাথে নির্যাতনের শিকার তরুণীর বিয়ে সম্পন্ন্ হয়েছে। জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে উভয় পরিবারের সম্মতির স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুয়ায়ী বিয়ের কাবিনসহ যাবতীয় তথ্যাদি হাইকোর্টে প্রেরণ করবো।
বিয়ে সম্পন্নের পর কারাফটকে হাইকোর্টের আদেশের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কনে ঢাকা টিবিউনকে বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, আদালতের আদেশে আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি, আমার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুন্দর সংসার জীবন গড়তে আমি সবার সহযোগিতা কামনা করি এবং একই সাথে আমার স্বামীর দ্রুত মুক্তি চাই।”
নববধূর পিতা ও জহিরুল ইসলাম জিয়ার পিতার ভাষ্য, কুচক্রীমহলের চক্রান্তে আমরা বিভ্রান্ত ছিলাম। আদালতের আদেশে ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা তারা উভয়ে দাম্পত্য জীবনে সুখি হবে।
উল্লেখ্য, সোনাগাজী উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামের জিয়াউদ্দিনের সাথে প্রতিবেশী কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে উভয়ের সম্মতিতে তারা শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর উভয় পরিবার তাদের বিয়ের উদ্যেগ নিলে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল টাকা দাবি করে।
চলিত বছরের ২৭ মে সোনাগাজী থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের হলে পুলিশ জিয়া উদ্দিনকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। পরে পুলিশের তদন্তে ধর্ষনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩০ জুন আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার বাদী ও আসামিপক্ষ আপোষে বিয়েতে সম্মত থাকিলেও নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি।
হাইকোটের আইনজীবী ফারুক আলমগীর বলেন, নিম্ম আদালতে জামিন না হলে জিয়া উদ্দিনের পরিবার আমার শরণাপন্ন হলে আমি জামিন চেয়ে হাইকোর্টে মিস মামলা দায়ের করি। গত ১ নভেম্বর বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে জামিন শুনানির সময় আমি আদালত জানান, কথায় কথায় ধর্ষণের মামলা না করে আমাদের প্রতিকার দেওয়া বাঞ্চনীয়।
এই বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় আদালত বিয়ের শর্তে আমার মক্কেলকে জামিন দিতে অভিমত ব্যক্ত করে আদেশ প্রদান করেন। আদালত আদেশে উল্লেখ করেন উভয়পক্ষ সম্মত থাকলে ফেনী জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ আদেশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করিবেন এবং বিয়ে সংক্রাক্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টকে অবহিত করিবেন। বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষের এমন প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা হলে আদালত জামিনের আদেশ প্রদান করবেন।
মতামত দিন