মাত্র এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের একভাগ সময়ে কাউকে কামড়ে বিষ ঢালতে পারে সাপটি! এ সাপের কোনো অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। বলা যায়, এর এক ছোবলেই মৃত্যু নিশ্চিত
ভোলা সদর উপজেলায় নিরীহ ও নির্বিষ অজগর ভেবে ভয়ংকর বিষধর রাসেল ভাইপার আটক করেছে স্থানীয়রা। সোমবার (৩০ নভেম্বর) রাতে সদর উপজেলার ধনীয়া ইউনিয়নের তুলাতুলী মেঘনা পাড় এলাকা থেকে সাপটি আটক করে স্থানীয়রা।
বন বিভাগের ভোলা সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা প্রথমে নির্বিষ অজগর ভেবে সাপটি আটক করে। উদ্ধারকৃত সাপটি প্রাপ্তবয়স্ক। এর আগে গত ২ বছরে সদরের রাজাপুর, ইলিশা ও তুলাতুলী থেকে ৭-৮টি চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধার হয়েছিল। সাপটি গহীন অরণ্যে অবমুক্ত করা হবে।
জানা যায়, চন্দ্রবোড়া বা উলু বোড়া ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত একটি অন্যতম বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। এই সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে অনেক দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন - মুন্সীগঞ্জে আবারও ধরা পড়েছে ভয়ংকর বিষধর ‘রাসেলস ভাইপার’
চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত এক মিটার; দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত হয়। চন্দ্রবোড়া নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত পরিবেশে এবং কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। এরা নিশাচর, এরা খাদ্য হিসেবে ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি ও ব্যাঙ ভক্ষণ করে।
চন্দ্রবোড়া সাপ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ সাপ। নদীয়া বর্ধমান ও উত্তর চব্বিশ পরগনা বর্তমানে বাঁকুড়া জেলার গ্রাম অঞ্চলে এই সাপ ভয়ের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ বেশি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?
নদীয়া জেলাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীনের দক্ষিণাংশ, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া সাপের ৭৫টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড আছে।
বন কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে। এটি গভীর বনে অবমুক্ত করা হবে।”
আরও পড়ুন - পদ্মার চরাঞ্চলে ভয়ংকর রাসেল ভাইপারের উপদ্রব, পরিদর্শনে জেলা প্রশাসন
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এটি ইঁদুর ও টিকিটিকি খায়। বসতবাড়ির আশেপাশে এদের প্রাচুর্যতা বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে রাসেলস ভাইপার অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষকে দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে কখনও কখনও আক্রমণও করে।”
জোহরা মিলা বলেন, “এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাই সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী সাপটি সংরক্ষিত।”
আরও পড়ুন - বনরুই পাচার ও বিলুপ্তি ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ কি যথাযথ?
আরও পড়ুন - শকুন সংরক্ষণে বাংলাদেশ, কী করছে সরকার?
আরও পড়ুন - মারা গেল মহাবিপন্ন বোস্তামী কাছিমটি
মতামত দিন