ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকাগামী যাত্রীবাহী একটি ট্রেন উকিলপাড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে এবং ট্রেনের চালক ঝালমুড়ি কিনছেন। ঝালমুড়ির প্যাকেট হাতে নেওয়ার পর পরই ট্রেনটি চলতে শুরু করে
নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন থামিয়ে চালক ঝালমুড়ি কিনছেন, এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরিপেক্ষিতে ঘটনায় তদন্ত করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার (৩০ নভেম্বর) রাত আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৮টায় শহরের উকিলপাড়া এলাকায় ট্রেন চালকের ঝালমুড়ি কেনার ঘটনা ঘটে। পরে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী একটি ট্রেন উকিলপাড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে এবং ট্রেনের চালক ঝালমুড়ি কিনছেন। ঝালমুড়ির প্যাকেট হাতে নেওয়ার পর পরই ট্রেনটি চলতে শুরু করেছে।
ঘটনাস্থলে ঝালমুড়ি বিক্রেতা ইয়াসমিন বেগম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনাটি পরশু দিনের। আমর স্বামী অন্যকাজে যাওয়ায় আমি দোকানে দাঁড়াইছি। তখন প্রায় সাড়ে ৮ বা পৌনে ৯টা। যাত্রীবাহী ট্রেনটি সিগালে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মত দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় ওই ট্রেনের চালক আমাকে বলে যে ‘আপা আমাকে ১০ টাকার ঝালমুড়ি দেন’। ওই লোক আবার সাথে সাথেই টাকা দিয়ে দিছে। কিছুক্ষণ পরই সিগন্যাল উঠে গেলে ট্রেন আবার ছেড়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে প্রায় ১৫-২০ বছর যাবৎ ঝালমুড়ি বিক্রি করি। এর আগে এ ধরনের ঘটনা আমাদের সামনে ঘটেনি। তবে সিগন্যাল বা ত্রুটির বিষয় থাকলে ট্রেন থামে। ওদিন সিগন্যালে লাল বাতি জ্বলে যাওয়ায় ট্রেনটি থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, “ওই দিন ওই সময়ে ট্রেনে চালকের আসনে ছিল মিলু রহমান।”
নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ বিষয়টি দেখেছি। আমার কাছে বিষয়টি ভিত্তিহীন মনে হচ্ছে। কারণ একজন ট্রেন চালকের সিগন্যাল, যান্ত্রিক ত্রুটি বা বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ট্রেন থামানোর কোনো নিয়ম নেই। যতটুকু শুনেছি ট্রেনটি ঢাকাগামী ছিল। এখন ট্রেনটি উকিলপাড়ায় কেন এবং কি কারণে থামনো হয়েছিলো তা আমি জানতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “কারো কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারার পরপরই তদন্ত শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের থানা পুলিশের (জিআরপি পুলিশ) পরিদর্শক মো. মোখলেছ বলেন, “এ ধরনের কোনো বিষয় আমাকে জানানো হয়নি। কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।”
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলরুট ও স্টেশন প্রাচীনতম ও বিখ্যাত। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ২টি ট্রেনে প্রতিদিন ২৪টি ট্রিপে প্রায় ৩০-৪০ হাজারের বেশি যাত্রী এ রুটে যাতায়াত করেন।
মতামত দিন