‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সমন্বয়ই পারে পার্বত্য চট্রগ্রামের কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে’
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) উদ্যোগে “আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ” প্রকল্পের কার্যক্রম অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের হল রুমে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) মাস্টার ট্রেইনার সুমিত বণিক প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, “বিএনপিএস ১৯৮৬ সাল থেকে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসছে। অধিকারভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে বিএনপিএস তৃণমূল পর্যায়ে কিশোরী, নারী-পুরুষদের সংগঠিত ও সচেতন করে তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর পাশাপাশি বিএনপিএস জাতীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট আইন, নীতি ও পদ্ধতিকে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়ক করে তুলতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, এরই ধারাবাহিকতায় তিন পার্বত্য জেলায় বিএনপিএস এর নারীর স্বাস্থ্য ও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ‘আমাদের জীবন আমাদের স্বাস্থ্য আমাদের ভবিষ্যৎ’ প্রকল্পের ৫ বছর মেয়াদী কার্যক্রম স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।”
২০১৯ সাল হতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সিমাভি নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩ পার্বত্য জেলার ১০টি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বান্দরবান জেলার সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা বলেন, “সরকারি-বেরসকারি সমন্বয়ের মাধ্যমেই আমাদের সেবাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যবিবাহ, প্রজনন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অনেক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন, সমাজ সেবা বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, প্রাণীসম্পদ বিভাগ, কৃষি বিভাগ, সমবায় বিভাগ এবং প্রশাসনের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে কাজ করতে পারলে কিশোরী ও নারীদের উন্নয়ন হবে।”
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মং টিং ঞো, বলেন, “নারী গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড তাই কৈশোরেই তাদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠে।”
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজা সরোয়ার বলেন, “বাল্য বিবাহ রোধে কাউন্সেলিং জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই যৌন সহিংসতা সামাজিকভাবে মীমাংসা হয়ে যায় যার ফলে একজন নারী তার প্রাপ্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।”
বিএনপিএসের চলমান প্রকল্পকে সময়োপযোগী ও কার্যকর উদ্যোগ আখ্যা দিয়ে রোয়ংছড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, “নারীরা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। সুতরাং তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হলে তারা সমাজের জন্য সম্পদে পরিণত হবে। আর এ উদ্দেশ্যে বিএনপিএসের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।”
সমাজ সেবার উপ-পরিচালক মিলটন মুহুরী তার মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “স্বাস্থ্য, খাদ্য, পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে কিশোরীদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে, তাহলেই কিশোরীদের শারিরীক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে। পাশাপাশি কিশোরী ও নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক ও শারিরীক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কিশোরীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবে।”
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচাক ডা.অং চালু, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান য়ই সা প্রু, অনন্যা কল্যাণ সংগঠন (একেএস) এর নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলী, “আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ” প্রকল্পের প্রকল্প সমন্ধয়কারী ম্যামিসিং মারমা, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অং চা মং, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, অ্যাডভোকেট মাধবী মার্মা, সাহারা সুদীপা ইউনুছ, গ্রাউসের প্রকল্প সমন্বয়কারী সবুজ চাকমা, তহ্জিংডং এর নির্বাহী পরিচালক চিং সিং প্রু, সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমাসহ “আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ” প্রকল্পের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একেএস, গ্রাউস ও তহ্জিংডং এর সার্বিক সহযোগিতায় বান্দরবানে “আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রকল্প” এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় ৯০ জন মেন্টর, ৯০টি ক্লাব ও ৩ হাজার ৬শ কিশোরী সদস্য কাজ করছে।
মতামত দিন