রাস্তাটি বনের ভেতর দিয়ে গেলেও তাতে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, বসানো হয়নি স্পিড ব্রেকার বা সতর্কীকরণ কোনো সাইনবোর্ড। ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের চাপায় রাস্তাটিতে প্রায়ই বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়
গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একটি বাঘডাশের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জয়দেবপুরের গজারি বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভুরুলিয়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী মো. মোরসালিন সৈকত ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে গজারি বনের রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি বাঘডাশ সড়ক পার হচ্ছিল। কিন্তু দ্রুতগতির একটি প্রাইভেট কার সেটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই বাঘডাশটির মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, “প্রাণীটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।”
আরও পড়ুন - রাস্তার পাশে পড়ে ছিল বাঘডাশটির মৃতদেহ
পরে শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে বন বিভাগের ডিভিশন অফিসের লোকেরা বাঘডাশটির মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রাস্তাটি বনের ভেতর দিয়ে গেলেও তাতে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, বসানো হয়নি স্পিড ব্রেকার বা সতর্কীকরণ কোনো সাইনবোর্ড। ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের চাপায় রাস্তাটিতে প্রায়ই বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর একই এলাকায় গড়িচাপায় আরও একটি বাঘডাশের মৃত্যু হয়েছিল। মো. মোরসালিন সৈকত/সৌজন্য
বিষয়টি জানতে, বন বিভাগের জয়দেবপুর ডিভিশন অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে ওই অফিসের বনপ্রহরী আহসানউল্লাহ, বাঘডাশটার মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়টি ঢাকা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ঢাকা ট্রিবিউনের হাতে আসা মৃত বন্যপ্রাণীর ছবিটি পাঠানো হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলাকে। ছবি দেখে তিনি ওই বন্যপ্রাণীটিকে বড় বাঘডাশ বা বাঘডাসা (Large Indian civet) বলে চিহ্নিত করেন।
আরও পড়ুন - ‘মহাবিপন্ন’ শকুনটিকে ধরে পেটাচ্ছিল শিশুরা
তিনি বলেন, “বাঘডাশকে গন্ধগোকুল অথবা খাটাশও বলা হয়ে থাকে। এরা নিশাচর ও বৃক্ষচারী প্রাণী। বাঘডাশ মূলত মাংসাশী, তবে ফলমূলও খায়। এদের গায়ের রং হালকা বাদামি, গলা ও লেজে সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে। এরা লম্বায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট এবং ওজনে ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত মাটিতে গর্ত করে বাসা বানায় এই প্রাণীটি।”
তিনি আরও বলেন, “একসময় প্রাণীটির সারা বাংলাদেশেই বিচরণ করতো। কিন্তু খাদ্যের অভাব, আবাসস্থল ও বনজঙ্গল ধ্বংস ইত্যাদি কারণে এটি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) রেড লিস্ট গ্রন্থে এটিকে বিপন্ন তালিকায় রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী এই প্রাণীটি সরংক্ষিত।”
আরও পড়ুন - কুমির ভেবে আটকে রাখা হয়েছিল ‘মহাবিপন্ন’ ঘড়িয়াল
আরও পড়ুন - বন বিভাগের সহযোগিতায় হাতি হত্যার অভিযোগ
আরও পড়ুন - খরগোশ শিকারিদের হাতে প্রাণ গেল মেছোবাঘের
মতামত দিন