সরকার কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় ভ্যাকসিন কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকার। মারাত্মক এই ভাইরাসের প্রকোপ দূর করতে ১৩.৮২ কোটি লোকের প্রত্যেককে ভ্যাকসিনের দুটি করে ডোজ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা তথ্য অনুযায়ী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচটি ধাপে তিনটি পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছে।
কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন) সংগ্রহের জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রবিবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী অক্সর্ফোড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকার (ভ্যাকসিন) তিন কোটি ডোজের মধ্যে প্রথম ধাপে ৫০ লাখ টিকা সোমবার বাংলাদেশে আসবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে আমাদের ২০ লাখ টিকা দিয়েছে ভারত সরকার। চুক্তি অনুয়ায়ী কাল আসবে ৫০ লাখ। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি টিকা আসবে। এসব ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পরের ধাপে টিকা আসলে ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোথায় তা রাখা হবে সেটিও ঠিক করে রাখা হয়েছে।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘আগামী ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে নার্সদের থেকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।’’
ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে কিছু কথাবার্তা হচ্ছে। ভ্যাকসিন কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সেজন্য আমাদের জাতীয় কমিটি আছে। তারা এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি শেষ করেছেন। অনেকে বলছেন ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে। অনেক ওষুধেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এই ভ্যাকসিনে যে সেটি হবে না, তা বলতে পারছি না। তবে করোনাভ্যাকসিনে যদি কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সেজন্য আমরা প্রতিটি হাসপাতালে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছি।’’
করোনাভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষকে কীভাবে আশ্বস্ত করা হবে জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, ‘‘এই পর্যন্ত যতগুলো ভ্যাকসিন পৃথিবীতে রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি, এসব ভ্যাকসিন থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাজ্যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ হয়েছে। তাই এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রয়োজন নেই।’’
তবে করোনাভ্যাকসিন কাউকে জোর করে দেয়া হবে না। ভ্যাকসিন স্বাধীনভাবে যে যে নিতে চায় তাকেই দেয়া হবে। এমনটাই জানালেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দেশে এখনও বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন আনার অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ বেসরকারিভাবে ভ্যাকসিন দিতে চায়, সে বিষয়ে আমরা পরে দেখব।’’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আগে ফ্রন্টলাইনারদের ভ্যাকসিন দেব। পর্যায়ক্রমে যাদের ভ্যাকসিন লাগবে তাদের সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
৩ পর্যায়ে ৫ ধাপে মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হবে।
প্রথম পর্যায়ে টিকা পাবেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৯ জন। দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা পাবেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার। তৃতীয় পর্যায়ে টিকা পাবেন ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক ও অন্যান্য বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার কর্মচারী এবং ধর্মীয় নেতারা প্রথম ধাপে টিকা পাবেন।
মতামত দিন