দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে বসবাসকারী ১,৪০০ যৌনকর্মীর মধ্যে খুব কম কর্মীই জানেন কীভাবে এই ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে হয়
করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষার লক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ যৌনপল্লীতে বয়স্ক যৌনকর্মীদের বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে টিকাদান শুরু করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) পশ্চিমে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে চলতি সপ্তাহে অন্তত এক ডজন চল্লিশোর্ধ্ব নারীকে টিকা দেওয়া হয় বলে জানান পল্লীর কর্মীরা।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, চল্লিশোর্ধ্ব যেকোন বাংলাদেশি এই ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। ফ্রন্টলাইনের কর্মীরা - নার্স, পুলিশ কিংবা সাংবাদিক হোক - যে কোনও বয়সে কোভিড-১৯ টিকা পেতে পারেন।
কর্মীরা বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই যৌনপল্লীতে বসবাসকারী ১,৪০০ যৌনকর্মীর মধ্যে খুব কম কর্মীই জানেন কীভাবে এই ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে হয়।
রাজবাড়ির, যেখানে যৌনপল্লীটি অবস্থিত, ডা. আসিফ মাহমুদ বলেছেন, "আমি যদি তাদের কাছে না পৌঁছাই তবে তারা হয়তো টিকা নিতে আসতে পারবে না। তারা এমন একটি গোষ্ঠী যারা মূলধারার জনগোষ্ঠীর সাথে সচরাচর মিশে না এবং সেজন্যই এই টিকাদান কার্যক্রমে তাদের কথা ভুলে যাওয়া হবে। তাদের মতো গোষ্ঠী যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের এই টিকাদান কার্যক্রমে উত্সাহ দেওয়া জরুরি।"
দাতব্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ যৌনকর্মীর আবাস রয়েছে। লকডাউনে ব্যবসা ধীর গতিতে চলেছিল, গত মার্চে লকডাউনের সময় যৌনপল্লীতে জরুরি খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন ছিল। তবে এনজিও কর্মকর্তাদের মতে, বছরের মাঝামাঝি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় এই গতি স্বাভাবিক হয়।
যৌনপল্লীগুলোতে যৌন কাজের অনুমতি আছে। তবে প্রায়ই পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বেশিরভাগ নারী রাস্তায় বা বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন।
রাইটস গ্রুপ "মুক্তি মহিলা সমিতি"-র আতাউর রহমান মঞ্জু বলেন, বেশিরভাগ যৌনকর্মী অনলাইনে নিবন্ধন করা "ঝামেলা" বলে মনে করেছিলেন। তবে তার গ্রুপের মতো রাইটস গ্রুপগুলো এই টিকাদান শব্দটি ছড়িয়ে দেওয়ার এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পক্ষে কাজ করেছে। তিনি আরও বলেন, "তারা সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, আমরা তাদের এড়াতে পারি না।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৫ বছর বয়সী এক যৌনকর্মী বুধবার প্রথম ডোজ গ্রহণের পর বলেন, তিনি যৌনপল্লীর অন্যান্য নারীদের এই কার্যক্রমে অংশ নিতে উত্সাহিত করার চেষ্টা করছেন।
তিনি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, "আমি মেয়েদের বলছি যে তাদের এক লাখ টাকা থাকলেও তারা সুঁই (ভ্যাকসিন) পেতে পারবে না, এমনই মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ এটি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এমন জায়গায় বাস করি যেখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকেরা বেড়াতে আসে, তাই আমি মনে করি আমাদের পক্ষে নিরাপদ থাকা খুব জরুরি।"
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৮০% লোককে টিকাদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে টিকাদান শুরু করে এবং এর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ লোককে টিকা প্রদান করা হয়।
সরকারি তথ্য অনুসারে, মার্চ মাসে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৮,৩৭৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
মতামত দিন