‘চার বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের চাপে ও তদন্তাধীন বিষয় বলে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম’
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান শিক্ষক রাজনীতির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এছাড়া অ্যালেক্স মার্টিন নামে যে ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সামিয়া রহমানকে পদাবনতি হয়েছে, ওই নামে কারও অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (১ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
সামিয়া রহমান বলেন, “যে লেখা আমার না, আমি শুধু আইডিয়া দিয়েছি। আমাকে না জানিয়ে ছাপা সেটি হলো। আমি নিজেই তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আবেদন করলাম, সেখানে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। আমি রাজনীতির শিকার।”
তিনি দাবি করেন, “যে অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যার পরিচয় দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস থেকে চিঠি এসেছে, সেই অ্যালেক্স মার্টিন বলেই তো ওই জার্নালে কেউ নেই এবং তারা এ ধরনের চিঠি পাঠায়নি। শিকাগো জার্নালের এডিটর নিজে এটি স্বীকার করেছেন।”
এ বিষয়ে তিনি জার্নালের সম্পাদকের সঙ্গে তার নিজের মেসেঞ্জারের একটি কথোপকথনের স্ক্রিনশট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন - গবেষণায় জালিয়াতি: ৩ ঢাবি শিক্ষকের পদাবনতি
তিনি বলেন, “এই বিতর্কিত নিবন্ধটি আমার লেখা নয়। নিবন্ধটি প্রকাশনার জন্য আমি জমা দেইনি। রিভিউয়ারের রিপোর্টে সম্পাদনা পরিষদ থেকে আমার কাছে কখনই পাঠানো হয়নি এবং কোনো অ্যাকসেপ্টেন্স লেটারও আমার বরাবর প্রেরণ করা হয়নি। বিতর্কিত নিবন্ধটি যেহেতু আমি জমা দেইনি, সেহেতু জমা দেয়া থেকে ছাপানো পর্যন্ত আমার কোনো দালিলিক সম্পৃক্ততা তদন্ত কমিটি এবং ট্রাইব্যুনালও খুঁজে পায়নি। আমি মারজানকে একটি আইডিয়া পাঠিয়েছিলাম মাত্র।’
আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা বিদেশি জার্নাল বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ডোমেইন থাকে। এখানে কথিত অ্যালেক্স মার্টিন সেই ডোমেইনও ব্যবহার করেননি। নিজস্ব ব্যক্তিগত মেইল থেকে তিনি এই চিঠি পাঠিয়েছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ পর্যন্ত চিঠিটির কোনও সফট কপিও আমাকে পাঠায়নি।
সামিয়া আরও বলেন, একটি মিথ্যা চিঠির ওপর ভিত্তি করে তদন্ত হলে, শাস্তি দেওয়া হলে, সেই তদন্তের কার্যকারিতা কি ষড়যন্ত্রমূলক নয়? দীর্ঘ চার বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে হয়রানি করে শাস্তি দিয়েছে। চিঠির অস্তিত্বই তো মিথ্যা।
তবে এ বিষয়ে গত চার বছর ধরে নিশ্চুপ থাকার কারণ ও পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, “এতদিন তদন্ত চলায় আমি চুপ ছিলাম। এখন আমি আদালতে যাব। আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যা যা করা প্রয়োজন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অভিভাবক চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আমার বিশ্বাস তিনি নির্দেশ দিলে সত্য ঘটনা, ষড়যন্ত্র সব প্রকাশিত হবে। একই সঙ্গে আমি একটি আইনি পদক্ষেপের মধ্যেও রয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, গবেষণা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিন শিক্ষকের পদাবনতি হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পদাবনতি হওয়া তিন শিক্ষক হলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
পদাবনতি হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারি অধ্যাপক পদে পদাবনতি করা হয়েছে। সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। ছুটি শেষে তিনি চাকরিতে যোগদান করার পর আরও দুই বছর তিনি প্রভাষক পদে থাকবেন। সহকারি অধ্যাপক ওমর ফারুকের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিলসহ তাকে প্রভাষক পদে পদাবনতি করা হয়।
মতামত দিন