কপোতাক্ষ নদী মরে যাওয়ার পর থেকে গ্রামটির ১২ হাজার মানুষের জীবনে দুর্দশা নেমে এসেছে
বাকা গ্রাম। ৮০ ভাগ লোকের জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি। কৃষির সাথে পানির সমন্বয় প্রয়োজন। কিন্তু কৃষি জমি যখন জলাবদ্ধায় থাকে সেখানের কৃষকরাও হতাশায় নিমজ্জিত থাকেন। ১২ বছর ধরে জলাবদ্ধতার কারণে একটির বেশি দুটি ফসল উৎপাদন সম্ভব হয় না বাকা গ্রামে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাকা গ্রামের চিত্র এমনই। চারদিকে ধুধু করা মাঠ। কিন্তু পানিতে সয়লাব। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষও এখন মৃত। মূলত এ নদীটি মরে যাওয়ার পর ২০১০ সাল থেকে এ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আসছে। জমে থাকা পানি নেমে যাওয়ার কোনো পথ না থাকায় তা ফসলি জমিতে জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এখানে আমন ধান চাষ করা যায় না। বোরো মৌসুমে ধান চাষ করতে হয় অনেক বিলম্বে। অনেক এলাকায় আগাম চাষ করা বোরো ধান কাটা শুরু হলে এখানে ধান চাষ করার জন্য জমি উপযোগী হয়।
কৃষক সবেদ আলী গাজী বলেন, জমিতে জমে থাকা পানি স্যালো মেশিন দিয়ে একদিকে সরিয়ে তারপর জমিতে বোরো ধান চাষ করতে হয়। আর ২০০০ হাজার বিঘার বিশাল এই বিল থেকে পানি সরাতে অনেকটা সময় লাগে। খরচ করতে অনেক টাকা।
লিয়াকত আলী মোড়ল নামে অপর এক কৃষক বলেন, কপোতাক্ষ নদ মরে যাওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী আশাশুনি থানার গ্রামের ওপর দিয়ে পাইপ টেনে পানি সরাতে হয়। এ কাজেও গ্রামবাসী লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে প্রতিবছর। তিনি বলেন, আগে ৫-৬শ টাকায় আমন চাষ হয়ে যেত। এখন এক বিঘা জমি থেকে পানি সরিয়ে চাষ করতে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। এত ব্যয় করেও ভাল ফসল পাওয়া যায় না। ফলে কৃষককে ক্ষতির মুখেই থাকতে হচ্ছে।
জমিতে কাজ না থাকার কারণে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। গৃহবধূ নুর নাহার বেগম জানান, জমিতে কাজ না থাকায় স্বামী এখন উপজেলা সদরে গিয়ে ইজিবাইক চালান।
কপোতাক্ষ নদী চালু থাকাকালে জলাবদ্ধতার সমস্যা ছিল না জানিয়ে জুলেখা বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, নদীটি মরে যাওয়ার পর এ গ্রামের মানুষ নানান সমস্যায় ভুগছে। নদীটি খনন করা জরুরি।
ফুলজান বেগম নামে এক নারী বলেন, “গাং মরার পরই এ গ্রামের মানুষেরও মরণ দশা চলছে। গাং নেই বলে আমাদের সমস্যা কাটছে না। কপোতাক্ষ নদী শুকিয়ে গেছে। পানি আসে না, নামেও না।”
বাকা গ্রামে জমে থাকা পানি সরাতে আশাশুনির শীধরপুর, খৈরহাটিসহ ৫-৬টি গ্রামের ওপর দিয়ে নালা কেটে ও পাইপ টেনে পানি সরাতে হয় মন্তব্য করে স্থানীয় ইউপি সদস্য হামিদ গাজী বলেন, “এ দীঘপথে পানি সরাতে স্যালো ম্যাশিন দরকার হয়। যা খুবই ব্যয়বহুল, সবার জন্য সম্ভবও নয়।”
স্থানীয় রাড়লি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার বলেন, কপোতাক্ষ নদী মরে যাওয়ার পর আশপাশের গ্রামের গৃহস্থালী পানি, বৃষ্টির পানি বাকা গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের এই নিচু জমিতে এসে জমে। ফলে এ বিলে ফসল উৎপাদন সমস্যা হচ্ছে। আগে এখান দিয়ে পানি কপোতাক্ষ নদীতে গিয়ে নামতো। এখন পানি নামতে না পেয়ে এ বিলেই জমে থাকছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, “তালা, পাইকগাছা ও কয়রা এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের ৩০ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ১শ কোটি টাকার এ প্রকল্প দেড় বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। এ খনন কাজটি তালার শালিখা থেকে কয়রার আজাদী পর্যন্ত হবে। এ প্রকল্প কাজ সম্পন্ন হলে ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ তালা, পাইকগাছা ও কয়রার মানুষ সুফল ভোগ করতে পারবেন। যা আগামী বছর নাগাদ দৃশ্যমান হবে।”
মতামত দিন