Thursday, April 25, 2024

সেকশন

English
Dhaka Tribune

‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ’

বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ এর সঙ্গে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সম্পৃক্ততা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন

আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২২, ১১:০৯ এএম

চীনের উদ্যোগে নেওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ আরও একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা ট্রিবিউনের প্রবীর কুমার সরকার। তাদের এই বিশেষ আলাপচারিতা পাঁচটি পর্বে প্রকাশিত হবে। আজ  পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব-

আজকের পর্বে, রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ এর সঙ্গে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সম্পৃক্ততা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন।

ঢাকা ট্রিবিউন: চীন কীভাবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ এর সঙ্গে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সম্পৃক্ততাকে শক্তিশালী করবে? চীনের অর্থায়নে বর্তমানে বাংলাদেশে কতটি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে? বড় প্রকল্পগুলো কী কী?

লি জিমিং:বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ উদ্যোগটি দারিদ্র্য বিমোচন, অসমতা এবং মানব বঞ্চনা দূর করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য একটি রোড-ম্যাপ প্রদান করে এবং এ বিষয়ক বিস্তৃত পন্থা নির্ধারণ করে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ও যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হল উদ্ভাবনী, সুগঠিত, সবুজ, উন্মুক্ত, উচ্চমানের এবং পারস্পারিক বিনিময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বাস্তব উদ্যোগ। যা শান্তিরক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এবং কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী সময়ে মানুষের উন্নয়নে কাজ করে।

বিআরআই চীন প্রস্তাবিত উদ্যোগ হলেও একচেটিয়াভাবে চীনের মালিকানাধীন নয়।এই উদ্যোগটি শুরুর পর থেকেই এটি আগ্রহী সকল পক্ষের উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশ বিআরআই উদ্যোগে সাড়া দেওয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এই উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এখন পর্যন্ত, বাংলাদেশ বিআরআই কাঠামোর অধীনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা এবং ফলপ্রসূ ফলাফল প্রাপ্তির দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।


এই সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব: ‘চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিতে দ্রুত কাজ চলছে’

সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ ও চীনের জন্য উন্নয়ন কৌশল সমন্বয় ও একীভূত করা স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিটি গঠন করেছি।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যার পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে চীনের চুক্তিকৃত প্রকল্প অগ্রধিকারভিত্তিতে রয়েছে এবং বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বছরে ২৯০% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

উন্নয়ন কৌশলগুলোর একীকরণকে আরও উন্নত করতে উভয় পক্ষ নিম্নলিখিত দিকগুরোতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে:

প্রথমত, আমাদের রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাসকে আরও জোরদার করতে হবে, সমান-সমান ফলাফলের ভিত্তি সুসংহত করতে হবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সহযোগিতার পরিবেশ সুরক্ষিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের আন্তঃ-সরকারি সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে এবং বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর বাংলাদেশ সফরের পর বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলেছে এবং এগুলো ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, আমাদের উচ্চমানের প্রকল্পগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে এবং সহযোগিতার পরিমাণ প্রসারিত করতে হবে। যেমন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র, চীনে বাংলাদেশি পণ্যের ৯৮% শুল্কমুক্ত রপ্তানি এবং বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক চীনা আমদানি এক্সপো এবং ক্যান্টন ফেয়ারের মতো প্রদর্শনী।

চতুর্থত, আমাদের নতুন সুযোগ অন্বেষণ করতে হবে এবং নতুন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে, আমরা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে অগ্রিম আলোচনা, মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে যৌথভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো, নদী পুনরুদ্ধার, সবুজ উন্নয়ন এবং কম কার্বন নিঃসরণ শক্তির বিকাশ এবং ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে পারি।

ঢাকা ট্রিবিউন: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ চীন। ক্লিন এনার্জি সেক্টরে চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি থেকে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হতে পারে?

লি জিমিং: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। জলবিদ্যুৎ, বায়ু শক্তি, ফটোভোলটাইক শক্তি এবং বায়োমাস শক্তি সঞ্চয়ের স্কেল যথাক্রমে ১৭ বছর, ১২ বছর, ৭ বছর এবং ৪ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম অবস্থানে রয়েছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতা ও উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ শক্তির দ্রুত পরিবর্তনের পটভূমিতে চীন ও বাংলাদেশের জন্য এই খাতে বৈশ্বিক আধিপত্য বিস্তারে সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি এই খাতের সুস্থ বিকাশের প্রচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

About

Popular Links