বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত এলাকা কুমারশাইল গ্রাম থেকে রেল লাইনের পূনঃস্থাপনের আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজ শুরু হয়। এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর ও দক্ষিণভাগ এলাকায় দুটি ইয়ার্ড তৈরি করাসহ প্রাথমিক পর্যায়ের শেষ হয়।
অবশেষে পরিত্যক্ত রেললাইনের নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ায় কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী ও বিয়ানীবাজার উপজেলার জনসাধারণের মধ্যে চলছে উৎসব আমেজ বইছে।
বড়লেখা উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল এলাকার ঝলঙ্গা ও কাঁকড়িছড়া পুরাতন রেলব্রীজের কাজ চলছে। শ্রমিকরা কেউ রেলব্রীজে কাজ করছেন আর কেউ পুরাতন রেল লাইনের কাজ করছেন। স্থানীয় লোকজন এসব কাজ দেখতে ভীড় জমান।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৫ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন চালু হয়েছিল। বড়লেখা উপজেলার লাতু সীমান্ত দিয়ে কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন হয়ে আসাম রেলওয়ের ট্রেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা যাওয়া করতো।
রেল লাইনটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় তা সংস্কার না করেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০২ সালের ৭ জুলাই লাইনটি বন্ধ করে দেয়। এরপর লাইনটি চালু করার জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন (বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ) অন্যতম প্রতিশ্রæতি ছিল বিজয়ী হলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর ট্রেনলাইন চালু করবেন। পরে নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থী শাহাব উদ্দিন। লাইনটি চালুর জন্য তিনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালান। একাধিকবার দাবি উত্থাপন করেন সংসদে।
পরে ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা সফরকালে বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন আবারো রেললাইন চালুর দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে রেললাইন চালুর ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পূনঃস্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবে ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই দ্বৈত গেজ লাইন করা হবে। এরমধ্যে সাত দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ওই বছরের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। পরদিন ৭ জুন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে এ প্রকল্পেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
কালিন্দি রেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ জরিপকারক (সার্ভেয়ার) রিপন শেখ জানান, গত ১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ পরিদর্শন করেছেন। ১০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলের পুরাতন ব্রীজ ও রেল লাইন উঠানোর কাজ শুরু করেছেন। এরআগে জানুয়ারি থেকে রেলের উপর জন্মানো ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করা হয়। ইতিমধ্যে কাজের যন্ত্রপাতি পৌঁছে গেছে। দক্ষিণভাগ ও শাহবাজপুর এলাকায় মালামাল রাখা হয়েছে। এখন থেকে কাজ চলমান থাকবে।’
বড়লেখা উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ খান বলেন, ‘রেলের কাজ শুরু হওয়ায় মানুষের মাঝে আনন্দ উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। লাইনটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষজন কম খরচে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত করতে পারবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া সেকশনের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মো. জুয়েল হোসেন বলেন, ‘এতোদিন কাজ দৃশ্যমান ছিল না। এখন কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে। ব্রীজ ভাঙা ও পুরাতন রেললাইন উঠানোর কাজও চলছে। কাজের জন্য সব যন্ত্রপাতি স্পটে রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।’