করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শুক্রবার (১৩ মার্চ) থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ চিকিৎসা ও আরো নানা কারণে নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। এখন ভারতে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় তাদের অনেকেই সংকটে পড়েছেন। এক বিশেষ প্রতিবেদনে এখবর জানিয়েছে বিবিসি।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে ভারত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত একমাসের জন্য বাংলাদেশসহ সবদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত করে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে বংলাদেশিদের ভারতে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে বন্ধ করা হয় বিমানপথ।
তবে এক দেশে আটকে পড়া আরেক দেশের নাগরিকরা তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। তবে মানুষের যাতায়াত বন্ধ হলেও দু'দেশের মধ্যে পণ্যপরিবহন স্বাভাবিক থাকছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন।
ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিব বিবিসি’কে জানান, এই বন্দর দিয়ে দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে ছয়হাজার মানুষ দু'দেশে যাতায়াত করে থাকে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার এই সংখ্যা সাড়ে সাতহাজার ছিল।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের অন্য স্থলবন্দরগুলোতেও মানুষের অতিরিক্ত চাপ ছিল।
বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা চিকিৎসা, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন তাদের অনেকেই এখন সংকটে পড়েছেন।
এমনই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাদেবা আবেদিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকা থেকে তিনি জানান, "আমি যখন ছয়মাস আগে গিয়েছিলাম, তখন ডাক্তার বলেছিল এই মার্চ মাসে যেন যাই। আমার হার্টের সমস্যা। আমি টিকেট কাটাসহ সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।"
"আমি ঘুরতে যাচ্ছি না যে একটা প্লান বাতিল হয়ে গেলে সমস্যা নেই। আমার ক্রিটিক্যাল সমস্যা আমি এখন কি করবো নিজেই বুঝতে পারছি না। আমার হয়তো নতুন করে ভাবতে হবে। যেহেতু আমার এটা হার্টের সমস্যা।"
যশোর থেকে গৃহিনী শিবা কুন্ডু বলেন, "আমি অসুস্থ। প্রতি তিন-চার মাস পর পর ডাক্তার দেখাতে যেতে হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে যেতে পারছি না। এখানে ডাক্তার দেখে ঔষধ দেয় আবার চেকআপ করে। এখনতো ডাক্তার না দেখালে ঔষধ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। কারণ আগের ঔষধতো শেষ। ফলে সমস্যা খুব।"
এদিকে, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বন্দরগুলোতে আমাদের ইমিগ্রেশন বন্ধ করা হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে তাদের ইমিগ্রেশনটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরফলে স্থলবন্দরগুলোতে কেউ যাওয়া আসা করতে পারছে না। কিন্তু পণ্য আনা নেওয়া স্বাভাবিক আছে।"
ভারতের সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো দিল্লি, কোলকাতা, চেন্নাইয়ের সাথে বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছে। তবে ভারতের কয়েকটি এয়ারলাইন্স সীমিত পর্যায়ে ফ্লাইট চালু রেখেছে বলে জানা গেছে।
দুইদেশের মধ্যে শুক্রবার দিনের বেলায়ও ট্রেন চলেছে, তবে বাংলাদেশ থেকে নতুন কোনও টিকেট বিক্রি করা হয়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মিয়া জাহান বলেন, "আমাদের ১১৪ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেন শুক্রবার ভারত গেছে। আর ভারত থেকে ৩১৩ যাত্রী নিয়ে তাদের ট্রেন এসেছে। এই দু'টো ট্রেন শনিবার যার যার দেশে ফেরত যাবে। এরপর আমরা নতুন টিকেট দিচ্ছি না।"
এরপর শুক্রবার রাতেই দু-দেশের মধ্যেকার ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে এবিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, দুইদেশের মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়া যে স্বাভাবিক রাখা হয়েছে, সেটা একটা বড় স্বস্তির ব্যাপার।