ঈদের ছুটিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন স্পটসমূহ। ঈদের দিন বিকাল থেকে সিলেটের প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভিড় ছিল দেখার মতো।
জাফলং, লালাখাল, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, ভোলাগঞ্জ জিরো লাইন, দরগাহে হযরত শাহজালাল(র.) মাজারের পাশাপাশি সিলেট নগরীর বিভিন্ন পার্কও হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য। সিলেটের সবকটি হোটেল-মোটেলও ছিল বুকড। তবে, ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট পর্যটকদের বিরক্তির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং, পান্তুমাই’র ঝর্ণা, বিছনাকান্দির স্বচ্ছ-সফেদ পানি আর সোয়াম্প ফরেস্ট খ্যাত রাতারগুল, ভোলাগঞ্জের জিরো লাইনে সাদা পাথরের অপরুপ দৃশ্য এক নজর দেখতে কার না মন চায়!
প্রকৃতির টানে বাংলাদেশের অনেক জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীরা ছুটে এসেছেন সিলেটে ঈদের ছুটি কাটাতে। তাদের বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে পর্যটন স্পটগুলোতে সৃষ্টি হয় অন্যরকম আবহের।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাফলংয়ের মামার দোকান থেকে শুরু করে বল্লাঘাট পর্যন্ত সহস্রাধিক পর্যটকবাহী গাড়ীর লাইন। রাস্তাঘাট, রেষ্টুরেন্টের সম্মুখ ছাড়াও ক্রাশার জোন এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়েছে বিপুল সংখ্যক গাড়ি।
ভোলাগঞ্জ জিরো লাইনে বৃহস্পতিবার সপরিবারে বেড়াতে আসা সিলেট জেলা বারের সাবেক এপিপি এডভোকেট কামাল হোসেইন বলেন, ‘এখানে না এলে এর প্রকৃত সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যেতো না। পাথরের সাথে পানির ঢেউয়ের মিতালী, মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় এবং পাথরের স্তুপ যে কারোরই মন জুড়াবে’। এখানে বেড়াতে আসতে পেরে পরিবারের সদস্যরা খুশি বলে জানালেন এ আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিছনাকান্দিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিপুল সংখ্যক ভ্রমন পিপাসু লোক ভিড় জমিয়েছেন। নারী পুরুষ, যুবক যুবতী, শিক্ষক ছাত্র, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ কয়েক হাজার লোকের আনা গোনা সেখানে লক্ষ্য করা যায়।
সিলেট নগরী থেকে সেখানে বেড়াতে আসা তোফায়েল আহমদ নামের একজন শিক্ষক জানান, তারা ১০/১২ জন বন্ধু মিলে বিছনাকান্দি বেড়াতে এসেছেন। সেখানে ভ্রমনের আনন্দই আলাদা বলে মন্তব্য এ শিক্ষকের।
জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার সেখানে তার ইউনিয়নের দুই শতাধিক যুবক বেড়াতে যান। বিছনাকান্দির সৌন্দর্য্য উপভোগ করে তারা অভিভূত বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
ক্রীড়াবিদ রিয়াজ উদ্দিন জানান, বিছনাকান্দি হচ্ছে সাত সাতটি পাহাড়ের মিলনমেলা। স্থানটি দেখে খুবই ভাল লাগছে।
বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত জলপরি ভাসমান রেস্টুরেন্টের প্রোপাইটার আনোয়ার হোসেন জানান, এবারের ঈদে সেখানে পর্যটকদের আগমন ছিল বেশী। বেচা-বিক্রিও বেশ ভাল হয়েছে বলে জানান তিনি।
গোয়াইনঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পর্যটন এলাকায় তথ্য কেন্দ্র এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল জলিল জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পর্যটকদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান জলিল।
সিলেট নগরীর আম্বরখানাস্থ ব্রিটানিয়া হোটেলের জিএম জনাব উজ্জ্বল জানান, গত ২২ ও ২৩ আগস্ট তাদের হোটেল পুরোপুরি বুকড ছিল। ঈদ উপলক্ষে সিলেটে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সিলেটে আসা এর মূল কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং বল্লাঘাট, বিছনাকান্দি সড়কের বঙ্গবীর থেকে হাদারপার এবং সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বর্ণি থেকে তেলিখাল অংশের অবস্থা খারাপ থাকায় পর্যটকদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। ভোলাগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন জানান, রাস্তাটির সংস্কারের কাজ চললেও মাঝখানের অংশের অবস্থা খারাপ থাকায় তাদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, সিলেট নগরীর বঙ্গবীর ওসমানী শিশু পার্ক, এক্সেলসিয়র সিলেট, ড্রীম ল্যান্ড পার্ক, অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডেও দর্শনার্থীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়।