খাদ্য সহায়তা না পেয়ে যশোরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন দরিদ্র নারী-পুরুষরা।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে যশোর শহরের রেলগেট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা আখতারের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। পরে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তারা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনারভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। জেলা প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করলেও দরিদ্র মানুষের অভিযোগ, খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে মুখ চিনে। আবার সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না এসব সহায়তা। একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি ও অফিসে গিয়েও খালি হাতে ফিরছেন অনেকে। তাই উপায় না দেখে বিক্ষোভে নেমেছেন তারা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রহিমা বেগম নামে এক নারী বলেন, বয়স হয়ে গেছে তাই কাজ করতে পারি না। ছেলে নেই। ভিক্ষা করে খেতাম। এখন বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না, ভিক্ষাও মেলে না। কী করে খাবো। মেম্বারের বাড়িতে গিয়েও চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বলে- ঈদে দেবে। তার আগে তো না খেয়ে মরে যাবো।
রাহেলা বেগম নামে অপর এক নারী বলেন, এতিম নাতিকে নিয়ে থাকি। পরের বাসায় কাজ করে খাই। ভাইরাসের কারণে বাসার কাজ ছুটে গেছে। এতিম নাতিকে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। কেউ সহায়তা দেয় না। সবাই মুখ চিনে দেয়। অনেকে একাধিকবার পেয়েছে। কিন্তু আমার কপালে কিছু জুটলো না।
রাব্বি হোসেন নামে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী বলেন, ছোটখাট ব্যবসা করে খেতাম। করোনাভাইরাসের কারণে এখন বাইরে বের হতে পারি না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। মুখ চিনে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে; এর প্রতিবাদ করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন খাদ্য সহায়তা না পেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। যে কারণে আজকে বাধ্য হয়ে সবার সাথে রাস্তায় নেমে এসেছি। যদি আমাদের কান্না প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছায়।
এদিকে, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলার খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক সেনা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর তারা মাইকিং করে সকলকে ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। এরপরও বিক্ষোভকারীরা পিছু না হটলে তালিকা করে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেবার আশ্বাস দিয়ে সকলকে ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। পরে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে ঘরে ফিরে যান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা আখতার জানান, “খবর পেয়েই ছুটে এসেছি। সেনা ও পুলিশের সহায়তায় বিক্ষোভকারীদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি রাস্তায় থাকলে খাদ্য সহায়তা মিলবে না। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া খাবার সবাই পাবে। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। সে মোতাবেক বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজনকে প্রতিনিধি করে তার মোবাইলফোন নম্বর নিয়েছি। দ্রুতই তাদের খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হবে।”